কলকাতা
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ১৪:০১
অত্যাধুনিক একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেল বানানো হচ্ছে ভারতে। রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় উত্তরপ্রদেশের অমেঠির একটি কারখানায় একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেলের এই উন্নততর সংস্করণ বানানোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। সোমবার রাশিয়ার জন সামরিক কর্তা জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষের দিকেই শুরু হতে পারে এই রাইফেলের উৎপাদন প্রক্রিয়া।
একে-২০৩ রাইফেলটি বানানো হচ্ছে ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে। ২০১৯ সালে অমেঠি জেলার ‘করওয়ার অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি’তে তৈরি করা হয় ‘ইন্দো-রাশিয়া রাইফেল্স প্রাইভেট লিমিটেড’। রাশিয়ার কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেলের এই উন্নত সংস্করণ তৈরির দায়িত্ব রয়েছে এই সংস্থার উপরেই।
বর্তমানে ভারতীয় সেনার পদাতিক ব্যাটেলিয়ন এবং রাষ্ট্রীয় রাইফেল্সের অস্ত্র হিসেবে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ‘ইনসাস রাইফেল’ ব্যবহৃত হয়। স্বয়ংক্রিয় একে-২০৩ রাইফেলের উৎপাদন শুরুর পর থেকে ইনসাস রাইফেলের বদলে ভারতীয় সেনার হাতে উঠবে এই অত্যাধুনিক একে-২০৩।
ইনসাস রাইফেলের কার্তুজ ৫.৫৬ মিলিমিটারের। এর তুলনায় একে সিরিজের ৭.৬২ মিলিমিটার কার্তুজ অনেক বেশি প্রাণঘাতী। কার্যক্ষমতাও অনেকটা বেশি।
কার্তুজ ছাড়া একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেলের ওজন সর্বসাকুল্যে ৩.৮ কেজি। দৈর্ঘ্য ৮৮০ থেকে ৯৪০ মিলিমিটার।
একে-২০৩ থেকে ছোড়া গুলির গতিও অনবদ্য। ট্রিগারে চাপ দেওয়ার পর সেকেন্ডে প্রায় ৭৩০ মিটার জোরে ছুটে যেতে পারে এই রাইফেলের কার্তুজ।
অত্যাধুনিক এই রাইফেল থেকে মিনিটে প্রায় ৭০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া সম্ভব।
৮০০ মিটার রেঞ্জের মধ্যে থাকা শত্রুদের অনায়াসে খতম করতে সক্ষম এই অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল।
একে-৪৭-এর মূল নকশাকে আরও আধুনিক করে তৈরি করা হয়েছে একে-২০৩। একে-৪৭-এর ডিজাইন বানিয়েছিলেন মিখাইল কালাশনিকভ। কালাশনিকভের তৈরি সেই নকশার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে একে-২০৩-এর নকশা।
২০১০ সালে রাশিয়ার ‘কালাশনিকভ কনসার্ন’ সংস্থা একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেলটি তৈরি করে।
প্রথমে এই রাইফেলের নাম দেওয়া হয়েছিল একে-১০৩এম। ২০১৯ সালে নাম বদলে রাখা হয় একে-২০৩ ।
একে-২০৩ রাইফেল একে-২০০ সিরিজের একটি রাইফেল, যা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয় ২০০৭ সালে। একে-২০০ সিরিজের প্রথম মডেলটি ২০১০ সালে তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালে আবার এর নকশায় বদল আনা হয়।
নকশা বদলের পর এর নতুন নাম দেওয়া হয় একে-১০৩-৩। ২০১৬ সালে আবার একে-২০০ সিরিজের রাইফেল নিয়ে কাজ শুরু হয়। একে-১০৩-৩ অ্যাসল্ট রাইফেলকে আরও উন্নত করে প্রথমে নাম দেওয়া হয় একে-৩০০। পরে নাম হয় একে-১০৩এম। অবশেষে ২০১৯ সালে এই রাইফেলে আরও কিছু পরিবর্তন এনে নাম দেওয়া হয় একে-২০৩ ।
রাশিয়ার সঙ্গে ৫,০০০ কোটি টাকার চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে আসতে চলেছে প্রায় ৬ লক্ষ ৭০ হাজার একে-২০৩ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। প্রথম ৭০ হাজার রাইফেল এই বছরের গোড়ার দিকে রাশিয়া থেকে আনানো হয়েছে।
বাকি ৬ লক্ষ একে-২০৩ তৈরি করা হবে অমেঠির ‘করওয়ার অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি’তে।
রাশিয়া সরকার পরিচালিত প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘রোসোবোরোন এক্সপোর্ট’-এর কর্তা আলেকজান্ডার মিখিভ সোমবার বলেন, ‘‘২০২২ সালের শেষের দিকে করওয়ার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেলের উৎপাদন শুরু হতে পারে। জোরকদমে তার প্রস্তুতি চলছে।’’
রোসোবোরোন এক্সপোর্ট রাশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রকল্পের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের রাশিয়া সফরের সময় একে-২০৩ নিয়ে রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি সই হয়েছিল।
চুক্তি অনুযায়ী রুশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ দেশের অস্ত্র কারখানাতেই কালাশনিকভ রাইফেলের সর্বাধুনিক মডেল বানানোর অনুমতি পায় ভারত।
২০১৯-এর মার্চে অমেঠির করওয়ার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে একে-২০৩ রাইফেল উৎপাদন প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
