এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। চাকরি করতে করতে চলত নাটক-থিয়েটারের রিহার্সাল। তবে সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয়ে মনোনিবেশ করেছিলেন। মফস্সল থেকে শহর কলকাতায় নিত্যদিন যাতায়াত। একের পর এক অডিশন দিয়ে যাচ্ছিলেন। সবে একটি টিভি সিরিয়ালে কাজ শুরু করেছিলেন সুচন্দ্রা দাসগুপ্ত। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ। মাত্র ৩০ বছর বয়সে মৃত্যু হল এই টেলি অভিনেত্রীর।
ছবি: সংগৃহীত।
শনিবার শুটিং শেষ হতে একটু রাত হয়েছিল। অনলাইনে একটি মোটরবাইক বুক করেছিলেন সুচন্দ্রা। পানিহাটিতে বাপের বাড়িতে ফিরছিলেন সেই মোটর বাইকে। কিন্তু ফেরা হল না ‘গৌরী এলো’ সিরিয়ালের অভিনেত্রীর।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শনিবার রাতে বিটি রোড ধরে মাঝারি গতিতে এগোচ্ছিল বাইকটি। পিছনের আসনে বসেছিলেন সুচন্দ্রা। বরাহনগরে একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে বাইকটির সামনে আচমকা একটি সাইকেল এসে পড়ে। চটজলদি ব্রেক কষেন বাইকচালক। ঝাঁকুনির চোটে নিয়ন্ত্রণ হারায় মোটরবাইকটি। বাইক থেকে উল্টে পড়ে যান অভিনেত্রী।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সুচন্দ্রার মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু তিনি রাস্তায় পড়ে তখনও উঠতে পারেননি। ওই সময়ের মধ্যে বাইকটির পিছন দিক থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছিল একটি দশ চাকার লরি। তাতে পিষে যান অভিনেত্রী। দুমড়ে-মুচড়ে যায় হেলমেট। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় অভিনেত্রীর মাথা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ছবি: সংগৃহীত।
সুচন্দ্রার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে। তবে বিয়ের সূত্রে স্বামীর সঙ্গে নরেন্দ্রপুরে একটি আবাসনে থাকতেন অভিনেত্রী। শনিবার রাতে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ।
ছবি: সংগৃহীত।
সুচন্দ্রার ঘনিষ্ঠদের সূত্রে খবর, ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি নবম কি দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার পর থেকে একা হাতে মেয়েকে বড় করেছেন বাবা প্রণব দাসগুপ্ত। ছোট থেকে নাচ-গান-নাটকে আকর্ষণ ছিল সুচন্দ্রার। থিয়েটারে অভিনয়ও টানত। বাবা তাতে মেয়েকে উৎসাহ দিতেন।
ছবি: সংগৃহীত।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন সুচন্দ্রা। তার পর অল্প কিছু দিন একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তিনি। তার সঙ্গে সঙ্গেই চলছিল নাটক-থিয়েটার। বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয় অভিনেত্রীর। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কলকাতার বাইরে গিয়েছিলেন কিছু দিনের জন্য। তার পর কলকাতায় ফিরে চাকরি ছেড়ে শুধু অভিনয় করতেন। বাবার মতো স্বামীও তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন।
ছবি: সংগৃহীত।
বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন সুচন্দ্রা। সবে কাজ পেয়েছিলেন ‘গৌরী এলো’ সিরিয়ালে। স্বপ্ন ছুঁতে পারছিলেন আস্তে আস্তে। এই কাজ পেয়ে কতটা খুশি ছিলেন তা অভিনেত্রীর সমাজমাধ্যম প্রোফাইল থেকে স্পষ্ট।
ছবি: সংগৃহীত।
সুচন্দ্রার ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, আরও বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে কাজ করার কথা চলছিল সুচন্দ্রার। দিনরাত পরিশ্রম করতেন তিনি। বলতেন, আস্তে আস্তে আরও কাজ আসছে। ‘গৌরী এলো’ ছা়ড়া ‘জয় জগন্নাথ’ নামে একটি সিরিয়ালে কাজ করেছেন। সম্প্রতি ‘পুলিশ ফাইল্স’-এ কাজ করেছেন। সোমবার থেকেই তা টেলিকাস্ট হওয়ার কথা।
ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক দিনের মধ্যে শুটিং ফ্লোরে সকলের বেশ চেনা হয়ে গিয়েছিলেন সুচন্দ্রা। ছোট রোল ছিল। তবে তাঁর উপস্থিতি নজর এড়ায়নি ‘গৌরী এলো’ সিরিয়ালের মুখ্যচরিত্রদের। তাঁর অকালমৃত্যুর খবর শুনে চমকে উঠলেন সিরিয়ালের নায়ক এবং নায়িকা। দু’জনে জানালেন তাঁরা শোকস্তব্ধ।
ছবি: সংগৃহীত।
‘গৌরী এলো’ সিরিয়ালের নায়ক বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পরিবারকে নিয়ে কলকাতার বাইরে রয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সুচন্দ্রার মৃত্যুর খবর পেয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘‘খুব কম দিনের আলাপ। তবে বেশ সম্ভাবনাময় মনে হয়েছিল। এ ভাবে চলে যাওয়া জাস্ট মেনে নেওয়া যায় না।’’
ছবি: সংগৃহীত।
একই কথা বলছেন সিরিয়ালটির নায়িকা মোহনা মাইতিও। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ছবিটা দেখেই চিনতে পারলাম। ভীষণ খারাপ লাগছে। কী বলব কিছু বুঝতে পারছি না।’’
ছবি: সংগৃহীত।
টেলি অভিনেত্রীর এ ভাবে চলে যাওয়া মোহনার মতো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। পরিচিতরা শোকস্তব্ধ। শোকপ্রকাশ করেছে টলিপাড়া।
ছবি: সংগৃহীত।
পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে দেহ। ময়নাতদন্তের পর তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ছবি: সংগৃহীত।
ইতিমধ্যে ঘাতক লরির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। সুচন্দ্রার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবার। স্বামী এবং বাবা কেউই কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
ছবি: সংগৃহীত।