আপনার আচরণ ঠিক কেমন হলে অফিসের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে? ছবি: সংগৃহীত।
অফিসেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। কাজ শেষ করার তাড়া তো আছেই, সেই সঙ্গেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। কাজের পরিবেশ, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক এইসবও প্রভাব ফেলছে মনের উপর। পাশাপাশি বসে কাজ করতে করতে সহকর্মীর সঙ্গে টুকটাক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি হতেই পারে। তবে সেই বিষয়টি নিয়ে অহেতুক চিন্তা অথবা সহকর্মীর প্রতি আপনার নেতিবাচক আচরণ, কাজের পরিবেশকে নষ্ট করে দিতে পারে। কথায় কথায় তর্ক বাড়ে, সম্পর্কও খারাপের দিকে যায়। তাই চেষ্টা করতে হবে নিজেকে ঠিক রাখার এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করার। আপনার আচরণ কেমন হলে কাজের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং কারও সঙ্গে সম্পর্কেও চিড় ধরবে না, তা জেনে নিন।
১) কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গেই মানিয়ে চলতে হয় প্রত্যেককে। সহকর্মীদের মধ্যে মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু তা থেকে যদি বিভেদ তৈরি হয় তা হলে কাজ করাই মুশকিল হয়ে উঠবে। এর রেশ পড়বে নিজের উপরেই। আপনারই মানসিক চাপ, উদ্বেগ বাড়বে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠবে। তাই পরিবেশ যেন বিষাক্ত না হয়ে ওঠে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সহকর্মীর সঙ্গে যদি বচসা শুরু হয়, তা হলে যুক্তিযুক্ত কথা বলে আপনি চুপ করে যান। এক পক্ষ চুপ থাকলে, অন্য দিক থেকেও আর জটিলতা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
২) সমস্যা যত গভীরই হোক, মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকতে হবে আপনাকেই। অনেকেই কর্মক্ষেত্রের অশান্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যদি অশান্তি বড় মাপের হয় তা হলে অন্য কথা, না হলে ধৈর্য ধরুন। নেতিবাচক কথা বলা বা চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। কারও কথায় কান না দিয়ে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে নিজের কাজটুকু করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, পরিস্থিতি সামলে উঠবেন সহজেই।
৩) খারাপ লাগা থাকতে পারে, কিন্তু ঘন ঘন অভিযোগ করবেন না অথবা আড়ালে সমালোচনা করবেন না। আপনি যদি একজন সহকর্মীর কাছে অন্য সহকর্মীকে নিয়ে আলোচনা করেন, তা হলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে। অশান্তি নিয়ে আপনি যত ক্ষণ কথা বলছেন বা কারও কাছে অভিযোগ করে যাচ্ছেন, তত ক্ষণই আপনি বিষয়টির মধ্যে রয়েছেন। সেই ভাবনা থেকে বেরোতে পারছেন না। এই বিষয়টিই পরে আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে এবং কাজের ব্যাপারেও আপনি উদ্যোগ ও উৎসাহ হারাতে থাকবেন।
৪) নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন, অন্যকে নয়। সহকর্মী খারাপ আচরণ করলেও, আপনি সহবত রেখেই কথা বলুন। আচার-আচরণেও শালীনতা বজায় রাখুন। দেখবেন, যিনি খারাপ আচরণ করেছেন, তাঁর ব্যবহারেও ইতিবাচক বদল আসবে।
৫) নিজের কাজে এমন কোনও ফাঁকও রাখবেন না, যা থেকে তিনি বিরক্ত করার সুযোগ পান। মনমেজাজ ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত কোনও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে অংশই নেবেন না। বরং সংযত হয়ে সহকর্মীকে জানান, এই বিষয়ে কিছু পরে আপনি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তার পরেও অভ্যাস না বদলালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।
৬) কর্মক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন। যাতে সহজে আপনার সঙ্গে কেউ কোনও বিতর্ক বা মনোমালিন্যে জড়াতে না পারেন। বেশি কথা বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলবেন না। অন্যের সব কথায় মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকুন। খুব বেশি আলাপ-আলোচনা করতে শুরু করলেই পরে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। নিজের ব্যক্তিগত কথা কম বলাই ভাল। অফিস নিয়ে আপনার সব ধারণা, বিশ্বাস বলতে যাবেন না। কারণ কে কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা আপনার জানা নেই। পরে এই বিষয়টি নিয়েই বড় সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন।
৭) সকলের প্রতি ভাল ব্যবহার ও নিজের কাজের প্রতি উৎসাহ রাখলেই আপনার চারপাশের পরিবেশ শান্ত থাকবে। সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখতে হবে, অফিস কাজের জায়গা, সেখানে পারিবারিক কোনও বিষয় নিয়েও আলোচনা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।