শসা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় জানালেন পুষ্টিবিদ ছবি: সংগৃহীত।
গ্রীষ্মের দাপট শুরু। এই সময়ে হালকা পোশাক, হালকা সাজের সঙ্গে হালকা খাদ্যাভ্যাসও খুব প্রয়োজন। শরীরের উপর যত কম চাপ দেওয়া যায়, তত ভাল। এই সময়ে এমন খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে জলের অভাব হতে দেয় না। গ্রীষ্মকালীন সব্জি ও ফলের উপর নির্ভর করেই তৈরি করতে হবে নতুন খাদ্যতালিকা। আর তাতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান নেবে শসা। এতে জলীয় উপাদান অনেক বেশি। তবে কেবল শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নয়, একাধিক উপকারিতাকে মাথায় রেখেও শসা খাওয়া দরকার। বছরের এই সময়ে অতিরিক্ত ঘাম হয় বলে শরীর থেকে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। শসা সেই মাত্রা বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে। সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শসা খেয়ে বদহজমে ভুগছেন কেউ কেউ। তবে কি সকলের জন্য শসা উপকারী নয়, না কি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে? স্বাস্থ্যকর খাবার তখনই স্বাস্থ্যকর হয়, যখন খাওয়ার সময়টি সঠিক থাকে। প্রশ্ন ওঠে, শসা খাওয়ার সেরা সময় কোনটি, অথবা কী ভাবে খেলে বদহজম হবে না?
একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা মাথায় রেখে গরমে শসা খাওয়া দরকার। ছবি : সংগৃহীত।
এই বিষয়ে আনন্দবাজার ডট কম-কে পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘শসার মূল দুই উপাদান হল, জল এবং ফাইবার। শরীরে জলের পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে এই সব্জির। গ্রীষ্মে তাই শসা খাওয়া খুব দরকার। কিন্তু অনেকেই যে কোনও সময়ে খেয়ে নেন বলেই হজমে সমস্যা হয়। লক্ষ করলে দেখা যাবে, গরমকালে স্যালাড খাওয়ার খুব চল রয়েছে। কেন? মূল কারণ শসার উপস্থিতি। আর এই স্যালাড হিসেবে শসা খাওয়াই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। তার কারণ, শসা কখনও সকাল সকাল খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। বরং স্যালাড হিসেবে কোনও খাবারের সঙ্গে খেতে হবে। এর নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।’’
শরীরে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি অথবা ওজন কমানোর জন্য অনেকেই সকালে খালি পেটে শসা খেয়ে নেন। কিন্তু পুষ্টিবিদ জানালেন, অন্য কোনও খাবার যখন পেটে পড়েনি, তখন শসা খেলে সেটির মধ্যে থাকা ফাইবারে পেটে ভরে যায়। অত ফাইবার শরীর সহ্য করতে পারে না খালি পেটে। ফলে বদহজম, পেট ব্যথা, ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। শসায় আসলে ক্যালোরি এতই কম থাকে যে, কেবলমাত্র ফাইবারের উপর ভিত্তি করে পাচক রসগুলি (এনজ়াইম) কাজ করতে পারে না। সকালে খালি পেটে কলা এবং পেঁপের মতো ফল খেলে কিন্তু অত ক্ষতি নেই, তার কারণ এগুলিতে ফাইবারের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেটও রয়েছে। যার ফলে পাচনক্রিয়ায় বাধা পড়ে না।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ, ‘‘যে কোনও খাবার, তা গোটা মিল হতে পারে অথবা স্যান্ডউইচ, তার সঙ্গেই শসা খাওয়া উচিত। যাতে কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে মিশে ফাইবার কাজ করতে পারে।’’ কার্বোহাইড্রেট যাতে পুরোপুরি শরীরে মিশে গিয়ে অতিরিক্ত মেদ তৈরি করতে না পারে, অথবা ব্লাড সুগার বাড়িয়ে না দিতে পারে, তার জন্য ফাইবার খাবারগুলির সঙ্গে মিশে যায়। আর সেটিই মল হিসেবে দ্রুত শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। তবে একই সঙ্গে রেশমী জানালেন, এক থালা বিরিয়ানির সঙ্গে শসা খেয়ে নিয়ে যদি কেউ ভাবেন, তা হলে আর কোনও চিন্তা নেই, তা হলে ভুল করবেন। কারণ এ সব খাবার থেকে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে প্রবেশ করবেই। সঙ্গে শসা খেলে হয়তো ক্ষতি একটু কম হতে পারে, কিন্তু তাও পরিমাপ বুঝে খাওয়া উচিত। এ দিকে হালকা খাবারের কার্বোহাইড্রেটকে খানিক পরিমাণ বাধা দিতে পারে ফাইবার। অর্থাৎ খালি পেটে শুধু শুধু শসা খেলে তাতে লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি।
রাত বা দিন নিয়ে অত কড়াকড়ি নেই। তবে দিনেই খাবারের সঙ্গে শসা খাওয়ার পক্ষপাতী পুষ্টিবিদ। রাতে খাবারের পর হাঁটাচলার সুযোগ বা সময় থাকে না বলে হজমের ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায়। সেই সময় অতিরিক্ত শসা খেয়ে ফেললে বিপাকক্রিয়া ব্যাহত হয়। পাচক রসগুলির সঙ্গে অতিরিক্ত ফাইবার এবং জল মিশে গিয়ে রসের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে পরিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যায়। সকালের মতো অত ভাল করে কাজ করতে পারে না। বিশেষ করে রাতের বেলা বয়স্কদের পাতে শসা না দেওয়ার পরামর্শ দিলেন রেশমী।
তা হলে এই গ্রীষ্মে নিয়ম করে শসা খান, কিন্তু খালি পেটে নয়। কোনও খাবারের সঙ্গে সকালের দিকে পাতে শসা রাখুন। অঢেল উপকারিতা রয়েছে শসায়।