প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওএস এখন আর কোনও বিরল রোগ নয়। প্রতি ১০ মেয়ের মধ্যে ১ জনের এই সমস্যা থাকে। এই রোগকে স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরা মূলত জীবনধারার সমস্যা বা লাইফস্টাইল ডিজিজ বলেই ব্যাখ্যা করে থাকেন। বহু মেয়ে এই সমস্যায় ভুগলেও এই রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। অনলাইনে খুঁজলেই নানা তথ্য পাওয়া যায় এই রোগ নিয়ে। অথচ নেটমাধ্যমে ঘুরছে প্রচুর ভুল ধারণাও। কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে নিন।
ডিম্বাসয়ে সিস্ট থাকলেই পিসিওএস
এই রোগে যেহেতু মেয়েদের ডিম্বাণু উৎপাদনে সমস্যা হয়, তাই অনেকের ক্ষেত্রে ডিম্বাসয়ের বাইরে ছোট ছোট সিস্টের একটি স্তর দেখা যায়। তবে আলট্রাসাউন্ড করিয়ে যদি দেখেন ডিম্বাসয়ের বাইরে কোনও রকম সিস্ট নেই, তার মানে এই নয় যে আপনার এই রোগ নেই। সিস্ট দেখা না গেলেও আপনার এই রোগের নানা উপসর্গ থাকতেই পারে। আবার ডিম্বাসয়ে কোনও সিস্ট থাকা মানেই সেটা পিসিওএস রোগের লক্ষণ নয়। আরও নানা কারণে সিস্ট হতে পারে।
শরীরে অবাঞ্ছিত লোম থাকবে
যেহেতু পিসিওএস থাকলে মেয়েদের শরীরে ছেলেদের হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ বেশি হয়, তাই অনেক মেয়েদের ঠোঁটের উপরে, পেটের চারপাশে, থুতনি বা বুকে অত্যাধিক লোম থাকতে পারে। তবে সব মেয়েরই একই লক্ষণ থাকে না। এমন বহু মেয়ে রয়েছেন, যাঁদের পিসিওএস থাকা সত্ত্বেও শরীরের লোম স্বাভাবিক।
মা হওয়া যাবে না
যেহেতু এই রোগের মূল সমস্যা ডিম্বাণু উৎপাদন না হওয়া, অনেক মেয়েকে প্রথমেই ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় যে মা হওয়া যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই তেমন নয়। পিসিওএস থাকা সত্ত্বেও বহু মেয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন। তা ছাড়াও নানা রকম ফার্টিলিটি চিকিৎসার সুবিধা এখন রয়েছে। ফলিক্ল স্টিমিউলেটিং ওষুধের সাহায্যেও অনেকে মা হতে পারেন।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব মানেই পিসিওএস
আরেকটি মারত্মক ভুল ধারণ মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে। প্রথমেই বলে রাখা ভাল মানসিক চাপ, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড, পেলভিকে কোনও রকম প্রদাহ, থাইরয়েডের সমস্যা, খুব বেশি পরিমাণে ডায়েটিং বা এক্সারসাইজ, হরমোনের গোলমাল— অনেক কারণেই মেয়েদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। শুধু পিসিওএস নয়। আবার এই রোগ থাকলে অনেকে মেয়ের যেমন খুব অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়, অনেকের আবার ততটা সমস্যা নাও হতে পারে।
পিসিওএস থাকলেই মেয়েরা মোটা হবে
এই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল। এটা সত্যিই যে বেশির ভাগ মেয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ থাকলে ইনসুলিন রেজিসট্রেন্স এত বেশি থাকে যে ওজন ঝরানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এবং খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের ওজন বেড়েও যায়। পিসিওএস থাকলে মেয়েদের মধ্যে স্থুলতা দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু অন্য দিকেটাও সত্যি। যে এমন অনেক মেয়ে রয়েছেন, যাঁদের এই রোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মনে রাখতে হবে এই রোগের উপসর্গ অনেক। এবং প্রত্যেক মেয়ের ক্ষেত্রেই এগুলি আলদা হতে পারে। তাই আপনার জীবনধারায় কী ধরনের বদল আনলে আপনি উপকৃত হবেন, তা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন।