কিরিবুরুর সানসেট পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।
পুজো এগিয়ে এলেই মনটা কেমন উড়ু উড়ু হয়ে যায়। এক বার ভাবেন শহর চষে টইটই করে ঠাকুর দেখবেন, তো এক বার ভাবেন ঘুরতে যাবেন। এই টানাপড়েনের মাঝে যখন ঘুরতে যাবেন বলে মনস্থির করেন, তত দিনে পুজো আরও খানিকটা এগিয়ে এসেছে। তাই ট্রেন, বিমানে টিকিট পাওয়ার আশা করাই যায় না। কিন্তু তাই বলে কি বাঙালিকে ঘরে আটকে রাখা যায়? কলকাতার কাছেই আশপাশের জেলায় রয়েছে এমন কিছু জায়গা, যেখানে পুজোর ক’টা দিন নিরিবিলিতে কাটিয়ে আসাই যায়।
১) কিরিবুরু-মেঘাতুবুরু
ওড়িশা এবং ঝাড়খন্ডের সীমান্তে অবস্থিত এই ছোট দু’টি জনপদ। এখানে মেঘ-বৃষ্টির খেলা চলতে থাকে প্রতিনিয়ত। শোনা যায়, ‘কিরি’ শব্দের অর্থ হাতি এবং ‘বুরু’ শব্দের অর্থ পাহাড়। মেঘতা নামটি মেঘ থেকেই এসেছে বলেই মনে হয়। এখানে বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান তেমন না থাকলেও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনে থেকে যাওয়ার মতো। পাহাড়ের উপর সানরাইজ় বা সানসেট পয়েন্ট থেকে গোটা জনপদটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। নির্জনতা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টানের কারণ। মনের মানুষটির সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে চাইলে বা ধুলো-ধোঁয়ায় ভরা শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে চাইলে পুজোর ছুটিতে ছোট্ট দু’টি পাহাড়ি গ্রামে ঘুরে আসতেই পারেন।
হাওড়া থেকে ট্রেনে বারবিল হয়ে সেখান থেকে গাড়িতে কিরিবুরু পৌঁছতে সময় লাগে আধঘণ্টা মতো। নিজের গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। সরকারি, বেসরকারি বহু হোটেল রয়েছে। ‘সেল’ সংস্থার গেস্টহাউসে যদি বুকিং করতে পারেন, তা হলে খুব ভাল।
২) মুকুটমণিপুর
রাঢ়বঙ্গের কথা উঠলেই মনে পড়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মুকুটমণিপুরের কথা। কংসাবতী নদীর পাশেই মুকুটমণিপুরের জলাধার। চারদিকে সবুজের সমাহার এবং ছোট ছোট টিলাঘেরা এই জায়গা পুজোর কয়েকটা দিনের ছুটির জন্য আদর্শ। কাছেই রয়েছে পরেশনাথ পাহাড়। পাহাড়ের চূড়াতেই লুকিয়ে রয়েছে মুকুটমণিপুরের যাবতীয় শোভা। চাইলে বিকেলে নৌকাবিহারও করতে পারেন। পুজোর এই সময়টা আবহাওয়াও বেশ মনোরম থাকে। তাই শাল-পিয়ালের জঙ্গলে ঘেরা মুকুটমণিপুর থেকে ঘুরে আসতেই পারেন।
রাতে থাকার জন্য সরকারি লজ, বেসরকারি হোটেল সবই রয়েছে। ভিড় এড়াতে চাইলে অনলাইনে বুকিং সেরে রাখা ভাল। হাওড়া থেকে পুরুলিয়াগামী ট্রেনে চেপে নামতে হবে বাঁকুড়ায়। সেখান থেকে গাড়িতে যাবেন মুকুটমণিপুর। এ ছাড়া, বাস কিংবা নিজস্ব গাড়িতেও আসা যায়।
৩) সুন্দরবন
জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ— এমন পরিস্থিতির কথা শুনে এসেছেন ছোট থেকে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি কোনও দিন। ভূগোল বইতে যে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কথা পড়েছেন, তাই চোখের সামনে ধরা দিতে পারে সুন্দরবনে। মাতলা-বিদ্যাধরী নদী, গহীন অরণ্য, জলে কুমীর সঙ্গে ডাঙায় রয়্যাল বেঙ্গলের গর্জন— কী নেই সুন্দরবনে! শীতের আগে পুজোর এই সময় থেকেই বহু পরিযায়ী পাখি আসে এখানে। তাই পাখির ছবি তুলতে ভালবাসেন যাঁরা, তাঁদের কাছে সুন্দরবন বিশেষ পছন্দের। পুজোর কটাদিন কলকাতা থেকে একটু দূরে এমন গা ছমছমে অথচ মনোরম পরিবেশে কটাদিন কাটিয়ে আসাই যায়।
কলকাতা থেকে সড়কপথে (ট্রেনেই বেশি মানুষ যান) ক্যানিং পৌঁছে সেখান থেকে আবার গাড়ি করে সুন্দরবন পৌঁছে যেতে পারেন। অথবা ঝড়খালি বা সোনাখালি থেকে লঞ্চে করে সুন্দরবন পৌঁছে যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে লঞ্চ বুক করে সেখানেই রাত্রিবাস করতে পারেন। না হলে গোসাবা, সজনেখালি বা ঝড়খালিতেও রাত্রিযাপন করতে পারেন। তার জন্য আগে বুকিং করতে হবে।