স্বাস্থ্য রক্ষায় খাবারের উপকরণ
আড্ডা-জমায়েতে কী দেখা যেত? মেয়েরা একসঙ্গে হলেই ওজন কমানোর চর্চায় ব্যস্ত। কত মোটা হয়ে যাচ্ছি, ঘি খাওয়া ভাল নয়, শুধু সেদ্ধ খেলেই ভাল, কিন্তু পেরে উঠি না। তা হলে এ বার কোন পোশাক মানাবে, আর কোন পোশাক মানাবে না, কে জানে বোধহয় ক’দিন পর থেকে শুধু শাড়ি ছাড়া আর কিছুই পরতে পারা যাবে না। এই সব কত কিছুই না হত।
আর ছেলেরা? রাজ্য-রাজনীতি, খেলা দেখা। ইলিশ মাছের দর, কোন দোকানে কী খাবার ভাল, সে সব নিয়ে কত্ত গপ্পো! কার বউ কোন রান্নায় পারদর্শী, কথার ফাঁকে গর্ব ঝড়ে পড়ত মাঝেমাঝে।
লক-ডাউনের পরে এক্কেবারে উল্টে গিয়েছে ছবিটা। মেয়েরা রবিঠাকুর-শ্রীজাত, মমতা-মুকুল, টাকা জমানোর আলোচনায় মগ্ন হলেও, ছেলেরা সে পাড়ায় পা দিচ্ছেন না মোটেও। কেন? এ বার তাঁরা ডায়েটিংয়ে মন দিয়েছেন যে। আর সেই ডায়েটিংয়ের গুঁতো এমনই যে, পাগল হওয়ার দশা বাড়ির মহিলাদের!
মেয়েদের রূপ নিয়ে যত মাথা ব্যথা করতে হয়, তা আগে কখনওই ছেলেদের করতে দেখা যায়নি। কারণ, মেয়েরা সৌন্দর্যের থেকে পুরুষ সঙ্গীর বোধ-বুদ্ধির দিকেই বেশি মন দিয়েছেন সর্বত্র। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ছিল উল্টোই। মেয়েদের রূপ সব সময়েই প্রাধান্য পেয়েছে। ফলে মেয়েদেরই মন দিতে দেখা গিয়েছে চেহারা, ওজন নিয়ে।
করোনার সময়ে চার দিকেই ছড়িয়েছে বার্তা যে, মোটা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা খানিক বাড়ে। তার উপরে টানা বাড়িতে বসে চলছে কাজ। জিম বন্ধ। মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও ভর করেছে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও এখন ছিপছিপে চেহারার কদর বেড়েছে। আর তাতেই গোল বেঁধেছে বিশ্ব জুড়ে।
সামাজিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডা, বাজারে হঠাৎ দেখা হলে একটাই আলোচনা মহিলা মহলে। পুরুষদের ডায়েটিং নিয়ে হইচইয়ের জেরে পাগল হওয়ার দশা তাঁদের। আগে নিজেরা সকলের জন্য দিব্যি রান্না করতেন ভাত-ডাল-মাছ-শাক-সব্জি। নিজেরা ভাত কম খেয়ে ডালটা একটু বেশি খেয়ে নিতেন। সে সব করে চুপচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেন ওজন। আর ওজন যদি কমতো, আনন্দে এক সাইজ ছোট জামা পরে, নিজের রূপে নিজেই মুগ্ধ হতেন। বান্ধবীদের প্রশংসা কুড়োতেন। কিন্তু ছেলেরা ঠিক যত হইচই করে বেশি রান্নাবান্নার বায়না করতেন আগে। একটা বড় ইলিশ আনলে তার আয়োজন নিয়ে চলত হুলস্থূল, এখন তেমনই দশা উল্টো পথে হেঁটে। সে ভাতের জায়গায় ওটস্ খাওয়াই হোক, আর এক কেজি ওজন কমাই হোক। ঢাকঢোল এমনই বাজছে দুনিয়াজুড়ে, যে পাগল হতে বসেছেন ঘরণীরা।
সপ্তাহান্তের একটু বেশি রান্নাবান্নার ধকলই আগে ভাল ছিল, বলছেন অনেকে। না হয় দু’বেলা পোলাও-মাংস রান্নার খাটনি ছিল, তাই বলে ওজন মেপে তার বিশ্লেষণ তো শুনতে হত না!