অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
একে তো মেয়ে, তায় আবার একা! সমাজের চোখে তাঁরাই তো অবলা। সে যতই অসুরদের হাত থেকে দেবতাদের বাঁচাতে মহিষাসুরমর্দিনীর আবির্ভাব হোক। বেহুলা যতই তাঁর মৃত স্বামী লখিন্দরকে নিয়ে একা ভেলা চড়ে ভেসে যাক। একা মেয়ে যতই পাহাড় জয় চড়ুক কিংবা রকেট চড়ে মহাকাশে যাক না কেন, অবিবাহিতা নারী মানেই দুর্বল ধরে নেওয়া হয়। এ ধারণা সমাজের সব স্তরে গেঁথে রয়েছে। অনেকে আবার মনে করেন, একা থাকা বা থাকতে চাওয়া আসলে অসুস্থতা। কোনও একটা সমস্যা না থাকলে নাকি কোনও মেয়ে একা থাকতে চান না! জটায়ুর ভাষায় যা কি না ‘হাইলি সাসপিসিয়াস’! একা থাকতে চাওয়া যে কোনও অপরাধ নয়, কোনও সমস্যা না থাকলেও যে একা থাকা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। কিন্তু তেমন জীবনের উদ্যাপন হয় কই?
কিন্তু ধারণা আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। একা নারী যেমন সন্তানকে বড় করছেন, তেমন ঘরের বাইরে বড় বড় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সঙ্গে আবার আনন্দেও থাকছেন। সেই আনন্দে এগিয়ে চলাকেই উদ্যাপন করতে রবিবার শহরের এক হোটেলে বসেছিল আসর। সেখানে হাজির ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ‘সিঙ্গল’ মেয়েরা। তাঁদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও। তিনিও সমাজের হিসাবে একা। একা মা-ও বটে। তবে শুধু স্বস্তিকা নন। সাহিত্য, শিক্ষা, খেলা, বিনোদন, ব্যবসা, ফ্যাশন— সমস্ত ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে রয়েছে একা মেয়েদের সংগ্রাম। লড়াইয়ের পথ তো সহজ নয়। স্বস্তিকারও চলার পথ কোনদিন মৃসণ ছিল না। কষ্ট পেয়েছেন, লড়াই করেছে, ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন। স্বস্তিকা বলেন, “মা-বাবা না থাকলে আমি আজ এই জায়গায় আসতে পারতাম না। একা, নিজে হাতে মেয়েকে বড় করতে পারতাম না। আমার বোন, বন্ধুরাও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার মেয়ে এবং আমি যেমন বন্ধু, তেমন আমার বন্ধুরাও এখন আমার মেয়ের বন্ধু।”
একা পথ চলা মেয়েদের একজোট করার স্বপ্ন নিয়ে বছর ছয়েক আগে ফেসবুকের পাতায় একটি দল গড়েছিলেন শ্রীময়ী পিউ কুন্ডু। যে মেয়েরা একা থাকেন, তাঁরাই সেখানে সদস্য। কখনও স্বেচ্ছায়, কখনও বা পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ে যে মেয়েরা একা চলার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের একজোট করে সুখ-দুঃখ আদানপ্রদান করা, জীবনকে উদ্যাপন করার জোর দেওয়াই এই দলের কাজ। রবিবার সে দলেরই সকলে এক জায়গায় হন। সেখানেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয় একা থাকা বেশ কয়েক জন নারীকেও।