সম্প্রতি বেশ কিছু পোস্টে ‘থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেম’ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে মার্ক জ়াকারবার্গের মালিকানাধীন সংস্থা মেটা। আর তার পর থেকেই নাকি গুগ্ল জুড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কী ভাবে উড়িয়ে দিতে হয়, তা নিয়ে সার্চ করার ধুম পড়ে গিয়েছে। তেমনটাই উঠে এসেছে একটি রিপোর্টে। কিন্তু কেন?
সম্প্রতি মেটার বেশ কিছু পোস্টে ‘থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেম’ বন্ধ করার ঘোষণা করেছেন জ়াকারবার্গ। একই সঙ্গে বহুজাতিক টেক জায়ান্ট সংস্থাটি তার বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের নিয়ম শিথিল করার এবং রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর উপর বিধিনিষেধ কমানোর পরিকল্পনাও করেছে।
মেটা সিইও জ়াকারবার্গের সংস্থার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত নিয়মকানুনে এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যেই। অনেক সমালোচক আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, জ়াকারবার্গের এই সিদ্ধান্ত ফেসবুক এবং ইনস্টা জুড়ে ঘৃণাভাষণ এবং ভুয়ো তথ্য-সহ ক্ষতিকারক পোস্টগুলির রমরমা বৃদ্ধি করবে।
আর তার পর থেকেই নাকি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্ট কী ভাবে ডিলিট করতে হয়, সেই সংক্রান্ত সার্চ অনেক বেড়ে গিয়েছে গুগ্লে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যদি রিপোর্ট সত্যি হয়, তা হলে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতেই এমনটা করছেন ব্যবহারকারীরা। মেটা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বিকল্প খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার মনে করছেন, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন ফেসবুক-ইনস্টা ব্যবহারকারীরা। আর সেই কারণেই অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার চিন্তাভাবনা করছেন অনেক ব্যবহারকারী।
কিন্তু কী ভাবে বিষয়টি প্রকাশ্যে এল? ‘গুগ্ল ট্রেন্ডস্’-এর তথ্য অনুযায়ী গত কয়েক দিনে ‘হাউ টু পারমানেন্টলি ডিলিট ফেসবুক অ্যাকাউন্ট (ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একেবারে কী ভাবে মুছে ফেলা যায়)’ এবং ‘হাউ টু ডিলিট ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট (ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কী ভাবে মুছে ফেলা যায়)’— এই দুই বিষয়ে সার্চের সংখ্যা অনেক বেশি পরিমাণে বেড়েছে।
ওই তথ্য অনুযায়ী, আগের থেকে এই বিষয়ে গুগ্লে অনুসন্ধান পাঁচ হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে কখনও গুগ্লে এই দুই বিষয়ে এত বেশি সার্চ হয়নি।
ভুয়ো এবং অসত্য খবরের লাগামছাড়া বিস্তার কমাতে এবং আপত্তিকর বিষয়বস্তু রোধে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ এবং সংযম নীতি প্রয়োগ করেছিল মেটা।
ফেসবুক জুড়ে ভুয়ো খবরের রমরমা বৃদ্ধির পরেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জ়াকারবার্গের সংস্থা। বিশেষত ২০২১ সালে ৬ জানুয়ারি আমেরিকায় ক্যাপিটল-কাণ্ডের মতো ঘটনাতে সমাজমাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়ানো নিয়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের দিকে আঙুল উঠেছিল। তার পরে পরেই বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে উঠেপড়ে লেগেছিল মেটা।
এর পর গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে বিশেষ করে নির্বাচন এবং জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সত্য-মিথ্যা পরীক্ষা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল ‘ফ্যাক্ট চেকিং’।
তবে গত ৭ জানুয়ারি আবার বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং’-এর নিয়ম শিথিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে মেটা। সমালোচকদের যুক্তি, মেটার এই নীতি প্ল্যাটফর্মগুলিতে আবার বিপজ্জনক এবং আপত্তিকর বিষয়বস্তু বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অনেক ব্যবহারকারীই সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলিকে তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবে দেখেন। আর তাই ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মেটা ব্যবহারকারীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক ব্যবহারকারী আবার তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্ট সংস্থার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ে আরও স্বচ্ছ হওয়ার দাবি তুলেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো মেটার সমাজমাধ্যমগুলির বিকল্প নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে নেটাগরিকদের একাংশের মধ্যে। এমনকি, ‘ব্লুস্কাই’ এবং ‘মাস্টোডন’-এর মতো সমাজমাধ্যমগুলি নিয়েও কৌতূহল দেখাচ্ছেন অনেকে।
মাস্টোডনের সিইও, ইউজেন রোচকো মেটার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, দায়িত্বজ্ঞান থাকা যে কোনও ব্যবহারকারীর জন্য মেটার ওই সিদ্ধান্ত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে মেটার যুক্তি অন্য। জ়াকারবার্গ জানিয়েছেন, বাক্-স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্কও এক্স (সাবেক টুইটার) অধিগ্রহণের আগে এই বাক্-স্বাধীনতাকেই হাতিয়ার করে নেমেছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।