সমস্ত স্তরের সরকারি হাসপাতালে প্রসূতিদের থ্যালাসেমিয়া ও সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হল। প্রতীকী ছবি।
রোগীর সংখ্যা আর কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে থ্যালাসেমিয়া ও সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া— এই দুই রক্তের রোগে আক্রান্ত না হয়, সে বিষয়েজোর দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত স্তরের সরকারি হাসপাতালে প্রসূতিদের ওই রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হল।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে প্রসূতি যখন চেক-আপে আসবেন, জন্মগত ওই দু’টি রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে তখনই তাঁকে অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার মতো থ্যালাসেমিয়া ও সিক্ল সেল অ্যানিমিয়ার জন্যও পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তের সংগৃহীত নমুনা ঠিক তাপমাত্রায় রেখে তা তিন দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে (টিসিইউ)। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ থেকে পাঠানো ওই নমুনার রিপোর্ট তিন দিনের মধ্যে দিতে হবে বলেও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, হাই পারফর্ম্যান্স লিকুইড ক্রোম্যাটোগ্রাফি (এইচপিএলসি) রক্ত পরীক্ষায় এই দু’টি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু রাজ্যের যে ২৩টি সরকারি হাসপাতালে টিসিইউ রয়েছে, সেখানেই একমাত্র ওই পরীক্ষা হয়। ২৮টি জেলার (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) অন্যান্য হাসপাতালে পরীক্ষা হয় না। এ বার ওই সমস্ত হাসপাতাল যুক্ত করা হয়েছে এক-একটি টিসিইউ-এর সঙ্গে।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তুফানকান্তি দলুই বলেন, “বিয়ের সময়ে বেশির ভাগই রক্তের পরীক্ষা করান না। কিন্তু সন্তান প্রসবের আগে প্রসূতির পরীক্ষা করা প্রয়োজন।” তিনি জানাচ্ছেন, মা ও বাবা দু’জনেই যদি দুই রক্ত রোগের একটিরও বাহক হন, তা হলে ২৫ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে তাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রসূতির পরীক্ষায় যদি পজ়িটিভ আসে, তখন স্বামীরও পরীক্ষা করা হবে। তাঁরও রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে, গর্ভস্থ ভ্রূণের জিন পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি দেখা যায়, ওই ভ্রূণও একই ভাবে আক্রান্ত, তা হলে ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করানোর বিষয়ে বোঝানো হবে দম্পতিকে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে থ্যালাসেমিয়া বা সিক্ল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, এমন রোগীর জন্ম আটকানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে এমন সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য দফতরের।”