Parenting Tips

সমাজমাধ্যমে দিনভর ডুবে ছোটরা, সন্তানকে নিয়ে রিল বানাচ্ছেন বাবা-মায়েরাও, কতটা ক্ষতি হচ্ছে?

খুদেরা বড় বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। খেলাধুলা ছেড়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং রিল নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৪
What are the harmful effects of social media, tips to prevent overuse

সন্তানের সমাজমাধ্যমে আসক্তি কাটাবেন কী ভাবে? প্রতীকী ছবি।

শিশুদের মুঠোফোনের আসক্তি কমাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সে দেশে ১৬ বছরের নীচে সমাজমাধ্যম ব্যবহার করা আইনত নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ জানিয়ে দিয়েছেন, খুদেরা বড় বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। খেলাধুলা ছেড়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং রিল নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। তাদের আসক্তি কাটাতেই এই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ভারতে তেমন কোনও কড়াকড়ি নেই। তাই শিশুরাও এখন দিব্যি সমাজমাধ্যমে রিল বানাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পাতায় চোখ রাখছে। বাবা-মায়ের চোখের আড়ালে প্রাপ্তমনস্কের জন্য দাগানো ভিডিয়োও দেখছে। সমাজমাধ্যমের প্রতি এই আসক্তি ভবিষ্যতে নানা মানসিক ও আচরণগত সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন মনোবিদেরা। তাই, এই আসক্তি কাটানোর কিছু উপায় জেনে রাখা ভাল অভিভাবকদের।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে মনোরোগ চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দু’ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে খুদেরা। প্রথমত, সন্তানকে নিয়েই নানা ভিডিয়ো ও রিল বানাচ্ছেন এখনকার বাবা-মায়েরা। শিশুর স্কুল যাওয়া থেকে খেলাধুলো, পছন্দের খাবারদাবার, পরিবারের একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার প্রতি মুহূর্তের আপডেট দিয়ে যাচ্ছেন সমাজমাধ্যমের পাতায়। ছোট থেকেই তাকে সমাজমাধ্যমের পাতায় ‘স্টার’ বানানোর এমন চেষ্টা হচ্ছে, যা আদতে শিশুর মনের উপর চাপ ফেলছে। কিছু ক্ষেত্রে এমন কনটেন্টও ভাইরাল হচ্ছে, যা শিশুর সম্মান, সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রশ্নের মখে ফেলছে। বহু ক্ষেত্রে ট্রোলিং, অর্থাৎ নেতিবাচক মন্তব্য, কটূক্তি, সমালোচনার শিকারও হতে হচ্ছে, যা শিশুকে অবসাদের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। মা-বাবার হাত ধরে ডিজিটাল দুনিয়ায় টিকে থাকার লড়াই গ্রাস করে শিশুমনকেও। ফলে বয়সের সঙ্গে বাড়ে অস্থিরতা, ধৈর্যের অভাব।

দ্বিতীয়ত, বাবা-মায়ের দেখাদেখি শিশুরাও সারা ক্ষণ সমাজমাধ্যমে ডুবে রয়েছে। ভার্চুয়াল জগৎ তাদের বাস্তব থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের উচিত, মুঠোফোন থেকে শিশুদের দূরে রাখার চেষ্টা করা। সেটা এক দিনে হবে না। শিশু ফোন দেখতে শুরু করলেই, তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। হয় বাইরে খেলাধুলা করাতে নিয়ে যান বা কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে সচেতনতার পাঠ দিন। সমাজমাধ্যমের সবটাই খারাপ নয়। সেখানে অনেক শিক্ষামূলক ভিডিয়োও থাকে, যা সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করতেও কাজে আসতে পারে। এমন বিষয়গুলি দেখতে অভ্যাস করাতে পারেন শিশুকে।

শিশুর আঁকা ছবি, সদ্য শেখা আবৃত্তি কিংবা ভালবেসে গেয়ে ওঠা গানের দিকে ক্যামেরা তাক করে রিল না বানিয়ে বরং প্রশংসা করুন। অনেক বেশি সৃজনশীল কাজ করতে উৎসাহ দিন শিশুকে। আপনাদের ফোনের ইউটিউব বা অ্যাপগুলিতে শিশু কী দেখছে, তা নজরে রাখুন। প্রয়োজনে অ্যাপ-লক করার ব্যবস্থা করুন। ইউটিউবে শিশু যাতে প্রাপ্তমনস্ক ভিডিয়ো দেখতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। সার্চ অপশনকে সেই ভাবে আপডেট করে রাখুন। ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপই শিশুকে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। শিশুর মুঠোফোন বা সমাজমাধ্যমের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেলে কোনও অভিজ্ঞ পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট বা মনোবিদের সাহায্য নেওয়াই ভাল।

আরও পড়ুন
Advertisement