বিশ্রামের প্রয়োজন হলে মস্তিষ্ক কী ভাবে ইঙ্গিত দেয় জানেন? ছবি: সংগৃহীত।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ। হাজারটা কাজ। বাড়ি-অফিস মিলিয়ে ঝক্কির শেষ নেই। কিন্তু কখনও এমন হয়েছে কি, দিনভর পরিশ্রমের পর ঘুম আসছে না? এক দিন নয়, দিনের পর দিন। কিংবা ধরুন, কাজে মন বসাতেই পারছেন না। নিজেই জানেন, এই ধরনের কাজ আগেও করেছেন। তবু, যেন কিছুতেই মনের মতো হচ্ছে না।
কখনও ভেবেছেন কি, কেন এমনটা হচ্ছে? ঘুম না আসা, মনঃসংযোগের অভাবের নানা কারণ থাকতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে, মাথা জানান দিচ্ছে, তার বিশ্রামের প্রয়োজন। আসলে বিপুল শ্রমের পর এক সময় মস্তিষ্কও আর চাপ নিতে পারে না। তারই বহিঃপ্রকাশ হতে পারে নানা ভাবে। কোন লক্ষণগুলি দেখলে বুঝবেন, শরীর এ বার বিরতি চাইছে?
ঘন ঘন মাথা যন্ত্রণা
কাজের চাপে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য মাথা যন্ত্রণা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ঘন ঘন এই ধরনের সমস্যা হলে সাবধান হওয়া দরকার। মাথা যন্ত্রণার অসংখ্য কারণের মধ্যে একটি হতেই পারে, মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে, এ বার তার বিশ্রাম প্রয়োজন। যদি সেই সময় খোলা হাওয়ায় হাঁটাহাটি করলে খানিক ভাল লাগে, সমস্যা কমে, তা হলে বুঝতে হবে, সেটাই কারণ ছিল।
মেজাজ সপ্তমে
সামান্য কারণ, কিন্তু হঠাৎ করে এমন প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেললেন, যা অর্থহীন। মানসিক চাপ বেশি হলে অনেক সময়েই কেউ সামান্য কারণে অধৈর্য হয়ে উঠতে পারেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করে ফেলতে পারেন। যদি কথায় কথায় রেগে যাওয়ার স্বভাব তৈরি হয়, তা হলে নিজেকে সময় দিন। শরীর ও মন বিশ্রাম পেলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কয়েক ঘণ্টার ছুটি নয়, কয়েকটা দিন ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসা এ ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ঘুমের অভাব
কাকভোরে উঠে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। দম ফেলার অবকাশ নেই। তবু ক্লান্ত শরীরে এলিয়ে পড়লেও, দু’চোখের পাতা এক হচ্ছে না। এমনটা অনেকেরই হয়। এক-দু’দিন এমন হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুমের অভাব শরীর-মনে যেমন প্রভাব ফেলে, তেমনই মস্তিষ্কও এ ভাবেও জানান দিতে পারে যে, তার কর্মবিরতি প্রয়োজন। অনেক সময় দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত নানা রোগের কারণ হয়ে ওঠে। ইনসমনিয়ার মতো অসুখও দেখা দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা নিয়ে হেলফেলা ঠিক নয়।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
আগে যেগুলি চট করে বলে দিতেন, এখন কি সেগুলি আর হঠাৎ মনে পড়ছে না? খুব সাধারণ বিষয় মনে করতে গিয়েও পেটে আসছে তবু মুখে আসছে না গোছের কিছু হচ্ছে? বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও, কম বয়সে এমন সমস্যার কারণ হতেই পারে মাথায় একসঙ্গে নানা চাপ। সেই চাপেই হয়তো খেই হারিয়ে ফেলছে মস্তিষ্ক।
ক্লান্তি
খাওয়াদাওয়া করছেন, শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদানের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে, তবু যেন ক্লান্তি ঘিরে ধরছে! অত্যধিক পরিশ্রম, কাজের চাপ, চিন্তাভাবনার জেরে শরীরও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার বহিঃপ্রকাশ এ ভাবেও হতে পারে। বেশ কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিলে যদি শরীর ভাল লাগে, তা হলেও বুঝতে হবে, মস্তিষ্ক বিরতি চাইছিল।
প্রত্যেক দিন অসংখ্য কাজের চাপে বিশ্রাম ঠিকমতো হয় না। ঘুম হলেও, মন চায় বেশি কিছু। তাই সপ্তাহে একটা ছুটির দিন হোক দুটো দিন— নিজের ইচ্ছাগুলিকে গুরুত্ব দিন। মোবাইল, ল্যাপটপে মুখ না গুঁজে খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে পড়ুন। এতে শরীর ও মন, দুই-ই চাঙ্গা হবে।