প্রতীকী ছবি।
কবি রণজিৎ দাশ লিখেছিলেন, ‘শুনেছি— দূরত্বে প্রেম; আলিঙ্গনে ত্রাণ— মনোটনি।’ দূরত্বে প্রেম কি আদৌ হয় বাস্তবে? বা হলেও, কতটা ধরে রাখা যায় তাকে? গত বছর অতিমারির জেরে হঠাৎ কোনও ঘোষণা ছাড়াই দূরত্ব চলে এসেছিল। স্পর্শ হয়ে গিয়েছিল নিষিদ্ধ। প্রিয়জন একই শহরে থেকেও তখন অনেক দূরে। বহু মানুষের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল এই অপ্রত্যাশিত, আরোপিত বিচ্ছিন্নতা। অনেকের সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছে এই সময়ে। হাতে গোনা কয়েক জন জিইয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেম্যাজিক। তারা হাতে হাত ধরেই পার করে এসেছে এই কঠিন সময়।
করোনা-পরবর্তী পৃথিবী ঠিক কেমন হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এমন আকস্মিক ভাবে একটি অজানা জীবাণুর কবলে গোটা পৃথিবী নড়ে যাওয়ার পরে সকলেই সহমত হবেন যে, জীবনে অনিশ্চয়তার বোধ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কখন আসবে দূরত্ব, কখন নৈকট্য, কেউ জানে না। তবে দূরত্বেও যে থাকা যায় প্রেমে তার দৃষ্টান্ত কিন্তু রয়েছে। তাই রইল সে ব্যাপারে কিছু কথা। কেমন করে দূরত্বের মধ্যেও ধরে রাখবেন প্রেম, সম্পর্কের আকর্ষণ?
১) চিঠি লিখুন:একবিংশ শতকে চ্যাটের মারফত চটজলদি ও তাৎক্ষণিক উত্তর পাওয়ার যুগে অপেক্ষার আনন্দ ভুলতে বসেছে মানুষ। নেটমাধ্যম ছ়াড়া এখন জীবনযাপন সত্যিই অচল। কিন্তু তার মধ্যেও হাতে লেখা চিঠির মাহাত্ম্য অম্লান। অন্য শহরে থাকা প্রিয়জনকে চিঠি লিখুন। প্রেমপত্রের কোনও জুড়ি হয়না।
২) সারাক্ষণ কথা না: প্রেমিক/প্রেমিকা থাকে দূরের শহরে। তাই কথাবার্তা এমনিতেই কম, নিয়মিত সাক্ষাতের প্রশ্নই নেই। অনেকে মনে করেন সকাল থেকে সন্ধ্যা দিনলিপির সমস্ত খুঁটিনাটি পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিলেই বোধ হয় এই ঘাটতি মিটবে। তা একেবারেই ভুল ধারণা। প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও এক সময়ের পরে একঘেয়েমি চলে আসতে বাধ্য। ব্যক্তিগত পরিসরেও অবৈধ প্রবেশ হচ্ছে বলে অনেকে মনে করতে পারেন।
৩) গোপন-কথা: দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হলে সঙ্গমও বন্ধ। কিন্তু শারীরিক চাহিদা তো থেকেই যায়। তা ছাড়া, আবেগ প্রকাশেরও একটি মাধ্যম নিঃসন্দেহে শরীরী ভাষা। বিকল্প হিসাবে নিয়মিত কথার পরিসরেই কখনও ইচ্ছেমাফিক আনতে পারেন যৌনতার অনুষঙ্গ।
৪) এক সঙ্গে অপেক্ষা:প্রেম মানেই তো একসঙ্গে অনেক কিছুর যাপন। কাছে থাকলে যেমন সেই উদ্যাপনের বিভিন্ন মাধ্যম থাকে, দূরে থাকলেও কিন্তু থাকে উপলক্ষ। সেই যাপনের অনেকটা জুড়ে তখন থাকে অপেক্ষা। একসঙ্গে একে অন্যের জন্য অপেক্ষা, অধীর আগ্রহে দিন গোনা পরস্পরকে কাছে এনে দেবে অনেকটা।
৫) চমকে আনন্দ: পরিকল্পনা করে দেখা করাতে আনন্দ তো আছেই। কিন্তু হঠাৎ দেখা হওয়ার আনন্দের সঙ্গে তুলনা হয়না তার। প্রিয়জনের কাছে আগমনের সংবাদ গোপন রেখে চলে যান দেখা করতে। এর চেয়ে বড় উপহার আর কী-ই বা হতে পারে?
৬) চ্যাট নয়, ফোনালাপ: চ্যাটের পরিসরে কথা ফুরিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। বরং, কথা বলুন ফোনে। প্রিয়জনের পরিচিত কণ্ঠের উষ্ণতায় দূরত্ব কমে আসে এক লহমায়।
৭) পছন্দের জিনিস এক সঙ্গে: কারও পছন্দ ফিল্ম দেখা, কারও কবিতা পাঠ। এখন ইন্টারনেটের যুগে দূরে থেকেও সম্ভব অনেক কিছুই। ডিসকর্ড বা গুগল মিটের মতো মাধ্যমে এক সঙ্গে ফিল্ম দেখা যায়। নিজেরা যা করতে উপভোগ করেন সেগুলি এক সঙ্গে করুন।