মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
বেশি ক্ষণ বাইরে গিয়ে কাজ করলেই তিন সন্তানের কথা মনে হয়। মনখারাপ হলেও ওদের দেখতে ইচ্ছা করে। যখন বাড়িতে থাকেন, তখন তাই ওদের সঙ্গেই সময় কাটান।
তিনি নায়িকা। প্রাক্তন সাংসদ। বাংলা তো বটেই, অন্য রাজ্যেও তিনি জনপ্রিয়, ঘরে ঘরে তাঁর নাম। কিন্তু সন্তানদের প্রসঙ্গ উঠলে শুধুই মাতৃত্ব ছলকে পড়ে প্রতি বাক্যে। পর্দার চাকচিক্য তখন কোথায়! তিনি তখন যেন আর পাঁচজন মায়ের মতোই।
মিমি চক্রবর্তীর কথা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তিনি নিজেকে তিন সন্তানের মা বলে পরিচয় দিতেও ভালবাসেন। সে ভাবেই সব দায়িত্ব পালন করেন। তাদের খাওয়াদাওয়া থেকে ‘স্পা’য়ে গিয়ে আহ্লাদ— সব কিছুর দিকে সমান নজর। আর বলেন, ‘‘মাতৃত্ব উপভোগ করার জন্য সব সময়ে সন্তানের জন্ম দিতে হয় না। নিজের মতো করে ভালবাসলে এবং দায়িত্ব পালন করেও মা হওয়া যায়।’’
মিমির সন্তানেরা চারপেয়ে। নাম চিকু জুনিয়র, ম্যাক্স এবং জাদু। এক জন ল্যাবরাডর, এক জন হাস্কি আর তৃতীয় জন ইন্ডি। এই তিন সারমেয় সন্তানকে নিয়েই তারকা মিমির সংসার। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নানা কথায় উঠে এল মিমির ঘর-সংসার এবং যাপন-পছন্দের কথা।
তিন সন্তানের জন্য হাতে করে খাবার বানান নায়িকা। রোজ সম্ভব হয় না। কাজের জন্য বাইরে থাকেন। কর্মজীবী মায়েরা যেমন হন আর কি! সারা দিন চিকুদের দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন গৃহ সহায়ককে। কিন্তু সুযোগ পেলে, এই মা নিজের মতো করে সময় কাটান তাদের সঙ্গে। মিমি বলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলেই আমার মন ভাল হয়ে যায়।’’
পর্দার বাইরে তাঁর জীবনে একটা অন্য দুনিয়া আছে। সেখানে সোনার গয়না পরে পুজো করেন মিমি। ঘর সামলান। সংসার করেন। তবে তা বাঁধাধরা ছকের মধ্যে পড়ে না। মিমির সংসার জীবন অন্য অনেকের থেকে আলাদা। আবার কোথাও-কোথাও মিলও আছে। যেমন অনেকে মনে করেন স্বামী-সন্তান, সন্তানের স্কুলের হোমওয়ার্ক, রবিবারের মাংস-ভাতই সকলের সুখের চাবিকাঠি। সে সবের থেকে বাইরে থেকেও যে পরিপূর্ণ হতে পারেন নারী, তা মনে করান মিমি। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ে বাধ্যতামূলক নয়। সন্তানের জন্ম দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সমাজ আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে যে, সেটাই সুখে থাকার একমাত্র মাপকাঠি। তা তো আসলে ঠিক নয়।’’ জীবন অন্য রকমও হতে পারে। আসলে নানা রকম হতে পারে। অন্তত এমনই মনে করেন মিমি। নায়িকার উপলব্ধি বলে, জীবন নানা রকম হবেই। আগে লোকে লিভ-ইন সম্পর্কের কথা ভাবতে পারত না। এখন পারে। ৫০ বছর পরে হয়তো আবার অন্য রকম সম্পর্কের ধারণা তৈরি হবে। তখন আরও নানা রকম কথা হবে তা নিয়ে। যেমন মিমির দিদি আছেন, তিনি বিবাহিতা। কিন্তু সন্তানের মা হওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাঁর নেই। আবার তাঁর অনেক বন্ধু বিয়ে করে সন্তান নিয়েও সুখে ঘর করছেন। তেমনই তাঁর জীবন আর এক রকম। বিয়ে করেননি। সন্তানের কথা ভাবেননি। কিন্তু তার মানেই তিনি একা, এমন নয়। মাতৃত্বের আনন্দ পান অন্য জায়গা থেকে। তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে জীবন নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু সব সময়ে সে সব হিসাব মেনে জীবন গড়া যায় না। আমি এখন চারপেয়েদের নিয়ে থেকেই সুখ পাই।’’ মিমি মনে করেন, প্রত্যেকের জীবনে একটা সময় আসে যখন কোনও বিশেষ একটি বিষয় তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর ক্ষেত্রে সারমেয়রা তেমনই। তাদের ভাল রাখা, ভাল থাকা নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত থাকেন মিমি। বলেন, ‘‘অনেকে ভাবেন, ওর কী একটা জীবন হল, একটা সন্তানও নেই। কিন্তু আমি মনে করি এই চারপেয়ে সন্তানদের দেখভাল করে, সুস্থ রেখে, সুখে থাকতে এক জন মা-ই পারে। আমার সন্তান থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। কিন্তু আমার ভালবাসা কখনও আলাদা হবে না এদের জন্য। আমি জানি নিজের সন্তানদের কী ভাবে বড় করি, তেমন জানি আরও ৫০০ অন্য জানোয়ারের কী ভাবে দেখাশোনা করি। সেটা তো মায়ের মতো ভালবাসতে না পারলে সম্ভব নয়।’’ এ ভাবেই তিনি ভাল থাকেন। এবং ভাল রাখায় বিশ্বাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই চারপেয়েদের নিয়ে থাকেন মিমি। তবে ২০১২ সাল থেকে তিনি মা হিসাবে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। চিকু আসে তাঁর জীবনে। এখন চিকু, তাঁর প্রথম সেই সন্তান, নেই। তার মৃত্যুর পরে ভেঙে পড়েছিলেন বটে। তবে তার পরে আরও তিন সন্তান এসেছে মিমির জীবনে। সংসার সব মিলে ভরে উঠেছে। ব্যস্ততাও চরমে থাকে। বলেন, ‘‘তিন জনে খুবই আহ্লাদে থাকে। আমার স্পায়ে যাওয়ার সময় না থাকলেও ওরা ঠিক স্পায়ে গিয়ে আরাম করে।’’ নিজে রোজ সময় দিতে না পারলেও এ ভাবেই সারমেয় শিশুদের যত্ন রাখার ব্যবস্থা করেন মিমি।
মা হিসাবে বেশ কড়া মিমি চক্রবর্তী। সন্তানদের স্পায়ে যেতে দিলেও বাইরের খাবার একেবারেই বারণ। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ‘প্যাকেজড’ খাবার খাওয়াই না ওদের। সব খাবার বাড়িতে তৈরি হয়। হয় নিজে বানাই, না হলে রেসিপি বলে দিই। ভাত, মুরগির মাংস, সব্জি দিয়ে তৈরি হয় ওদের বিশেষ খাবার।’’ এ ছাড়াও যখন যেমন সময় পান, বানিয়ে দেন নিজে হাতেই। যেমন গরমের সময়ে ‘ইয়োগার্ট পপসিকলস’, ‘ব্লুবেরি’ বা তরমুজের ‘পপসিকলস’ বানান সন্তানদের জন্য।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বেশ ভাবনাচিন্তা করেন মিমি। আর বলেন, ‘‘আমার সন্তানেরা হল দারুণ ‘থেরাপিস্ট’। আমি নিজের মনোবিদকেও বলেছি সে কথা।’’ জাদু, চিকু, ম্যাক্সরা বাড়িতে থাকলে আর মনখারাপের সুযোগ থাকে না ওঁর। মায়েদের যেমন হয় আর কি!