মাকে দেওয়া উপহার হোক ভালবাসায় মোড়ানো। ছবি: সংগৃহীত।
মা। ছোট্ট একটা ডাক। তাতেই ধরা জীবনের সব চেয়ে কাছের মানুষটি। যাঁর শরীর বেয়ে এই পৃথিবীতে আসা, যাঁর আদরে-যত্নে বেড়ে ওঠা, যাঁর জীবনের সবটুকু জুড়ে সন্তানকে ভাল রাখার খিদে। সেই মাকে খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠতে দেখলে কার না ভাল লাগে! আপনার দেওয়া ছোট্ট একটি উপহারই কিন্তু সেই ‘ম্যাজিক’ জানে। সে মায়েদের উদ্যাপনে বছরের একটা বিশেষ দিনে হোক, কিংবা অন্য যে কোনও দিনে।
বড়সড় চমক দিতে হবে, এমন মাথার দিব্যি নেই। বরং উপহারের মধ্যে লুকোনো থাক মুঠো ভর্তি ভালবাসা। ব্যস! মা-কে আর পায় কে! তাই উপহার বাছাইয়ে থাক খানিকটা ভাবনাচিন্তা। কী দিতে পারেন ভাবছেন? রইল তারই হদিস।
পরিচর্যার টুকিটাকি
সন্তান এবং গোটা পরিবারের খেয়াল রাখতে গিয়ে, কিংবা নিজের চাকরি, সংসার একা হাতে সামাল দিতে গিয়ে নিজেকেই আর যত্ন করে উঠতে পারেন না অনেক মা-ই। একটু বয়স বাড়তে না বাড়তেই তাই বুড়িয়ে যান তাড়াতাড়ি। ওঁকে বরং দিন ত্বক-চুল-চোখ পরিচর্যার কিছু টুকিটাকি ভরা বাক্স। মনে করিয়ে দিন, অন্যের যত্ন নিতে নিতে নিজেকে যত্ন করতে ভুলে যাওয়ার দিন শেষ। এ বার বরং আপনিই খেয়াল রাখুন মা নিজের পরিচর্যাটা ঠিকঠাক করছেন কি না।
নিজের হাতে মায়ের সাজ
বরাবরই দেখে আসছেন মা গয়না পরতে ভালবাসেন। সব সময়ে সোনা-রুপো পরার সুযোগ না হোক, অন্তত ইমিটেশন, অক্সিডাইজড বা ডোকরা থাকেই কানে-গলায়-হাতে। তার চেয়ে যদি নিজে হাতে তৈরি করে দেন একটা গয়না? ডিআইওয়াই জুয়েলারির অজস্র ভিডিয়ো পেয়ে যাবেন একটু নেট ঘাঁটলেই। তার পর হাতের কাছে থাকা উল, পুঁতি, কাগজ, কাঠের টুকরো দিয়ে বানিয়ে ফেলুন সুন্দর একটা নেকলেস কিংবা ব্রেসলেট। মায়ের মুখের হাসিটাই বলে দেবে কেমন লাগল!
ছবিতে ছোটবেলা
বড় হতে হতে মায়ের থেকে একটু একটু করে আলাদা হয়ে গিয়েছে আপনার দুনিয়া। ছোটবেলার হারানো দিনগুলি মা-কে ফিরিয়ে দিলে কেমন হয়? পুরনো অ্যালবাম ঘেঁটে খুঁজে নিন এক সঙ্গে তোলা প্রিয় কিছু মুহূর্তের ছবি। স্ক্যান করে ভরে দিন একটা সুন্দর ডিজিটাল ফটোফ্রেমে। এক নিমেষে ফিরে আসবে ফেলে আসা সময়। তার স্বাদই আলাদা কিন্তু
হারানো শখের খোঁজ
গোটা ছোটবেলা কেটেছে মা-কে ঘিরে। বড় হয়ে, ব্যস্ত রুটিনে সেঁধিয়ে গিয়ে আজকাল আর হাতে সময় কই! দিব্যি বোঝেন, মা একা হয়ে পড়ছেন ক্রমশ। এ দিকে, অনেকটা সময় যে এক সঙ্গে কাটাবেন, তারও উপায় নেই। তা হলে? এক কালে মা হয়তো ছবি আঁকতেন, বাজাতেন গিটার কিংবা মাউথ অর্গান, অথবা ভালবাসতেন বাগান করতে। সংসারের ঘূর্ণিপাকে যে সব শখ কবেই হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলিকেই একটু তরতাজা করে তুলুন না। আঁকার সরঞ্জাম, সেই গিটার কিংবা মাউথ অর্গান কিনে এনে কিংবা ছোট্ট একটা কিচেন গার্ডেনের ব্যবস্থা করে মা-কে বরং ফিরিয়ে দিন হারিয়ে যাওয়া শখ।
নিজের সঙ্গে দেখা
নিজের সঙ্গে সময় কাটানো বা মি-টাইম এখনকার প্রজন্মের কাছে যতটা পরিচিত ধারণা, ষাট পেরনো অধিকাংশ মায়েদের কাছেই একেবারে অচেনা, অজানা ভাবনা। মা-কে তাই বরং উপহার দিয়ে দেখুন খানিকটা মি-টাইম। সালোঁর পরিচর্যা, পছন্দের খাওয়াদাওয়া, সিনেমা বা নাটকের টিকিটে মোড়া একটা দিন হতে পারে, হতে পারে কাছে-পিঠে ডে-আউটের ব্যবস্থা। মাকে পাঠান নিজের সঙ্গে একটা দিন কাটাতে। দেখুন না মা-ও তাঁর হারানো ‘আমি’কে খুঁজে পান কিনা!
ইচ্ছে মতো ইচ্ছেপূরণ
অনেক দিন ধরে নিজের জন্য কোনও একটা জিনিসের শখ মায়ের। হয়তো একটা বিশেষ শাড়ি কিংবা গয়না, অথবা অচেনা রেসিপির একটা রান্নার বই কিংবা কোনও গ্যাজেট। কিন্তু কিছুতেই নিজে কেনেননি। মুখ ফুটে বলেনওনি কাউকে। কিন্তু আপনি টের পেয়েছেন ঠিক। তা হলে সেটাই কিনে ফেলুন না বরং। মা-কে কিচ্ছুটি না বলে। দেখুন না কেমন চমকে যান তিনি!
মায়েরা আসলে বড্ড অল্পে খুশি হতে শিখে যান। কোন জাদুতে কে জানে! আপনার দেওয়া একটা ছোট্ট উপহার সেখানে উপচে পড়া খুশির ভাঁড়ার ঘর। আর সেই মুহূর্তটুকু আনতে অল্প একটু ভাবনাচিন্তাই যথেষ্ট!