Rapid Weight loss could Be Dangerous

দ্রুত ওজন ঝরাতে গিয়ে কি অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছেন? হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি নিয়ে কী বলছে গবেষণা?

বিশ্বের অনেকে দেশেই স্থূলতার মতো সমস্যার বেড়ে চলা চিকিৎসকদের কাছে চিন্তার। আবার দ্রুত ওজন ঝরানোর প্রবণতাও কম বিপজ্জনক নয়। এ নিয়ে কী বলছে গবেষণা?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ১১:০৭
দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো? ছবি:ফ্রিপিক।

স্থূল শরীর, অতিরিক্ত ওজন নানা রকম অসুখবিসুখের কারণ বলেন চিকিৎসকেরা। স্থূলতার সমস্যা থেকে যে শুধু হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিই বাড়ে তা নয়, টাইপ ২ ডায়াবিটিস, অস্থিসন্ধিতে ব্যথার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। তবে শুধু বাড়তি ওজন নয়, আচমকা ওজনের অনেকখানি হেরফেরও শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে, বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা।

Advertisement

লক্ষ্য যখন দ্রুত মেদ ঝরানো

ওজন ১০০ কেজি। ২ মাসে কী ভাবে ২০ কেজি ওজন কমানো যায়, সেই উপায় এখন বাতলে দেন সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা। সে সব দেখেশুনে কেউ কঠোর ডায়েট, আবার কেউ ডায়েটের সঙ্গে ঘণ্টা পর ঘণ্টা শরীরচর্চায় মন দেন। তাতে লাভ হয়। ওজন কমে। কিন্তু মেদ ঝরলেও আদতে শরীর কতটা সুস্থ থাকে?

অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি কমে কি?

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে গিয়ে এক ধাক্কায় ওজন কমাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে, বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা। এ নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজের অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। তাতেই দেখা গিয়েছে, এক ধাক্কায় অনেকটা ওজন কমে যাওয়া কারও কারও ক্ষেত্রে কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ‘হার্ট’-এ প্রকাশিত গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে, কী ভাবে দ্রুত অনেকটা ওজন কমে বা বেড়ে যাওয়া হার্টের উপর প্রভাব ফেলে।

সমীক্ষাটি করা হয়েছিল ব্রিটেনে। ৮ হাজার ২৯৭ জন জন ব্রিটেনবাসী এতে অংশ নেন। ব্রিটেনের বায়োব্যাঙ্ক থেকে ১৪ বছরের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, আচমকা ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, দুই-ই কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে

1. খুব দ্রুত কারও ওজন ১০ কেজি বেড়ে গেলে হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি তিন গুণ বেড়ে যেতে পারে। অন্যান্য রোগে মৃত্যুর সম্ভবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

2. আবার কারও ওজন দ্রুত ১০ কেজি কমে গেলে শুধু হৃদ্‌রোগ নয়, যে কোনও অসুখে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

3. ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন-সহ নানা কারণে আচমকা ওজন বৃদ্ধি হলেও ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

ওজন কমানো কখন বিপজ্জনক?

গবেষণা বলছে, মেদ ঝরাতে গিয়ে অতিরিক্ত কসরত করে বা কড়া ডায়েটে থেকে এক ধাক্কায় অনেকটা ওজন কমানো বিপজ্জনক। বিশেষত হৃদ্‌রোগের সমস্যা থাকলে সেই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। গবেষকদের যুক্তি, এক ধাক্কায় ওজন কমার ফলে পেশির ঘনত্ব কমে যাওয়া, পুষ্টির ঘাটতি, বিপাকহারের হ্রাস-বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে হৃদ্‌যন্ত্রে।

গবেষকের এক জন বারাবারা পিয়েরসিওনেক বলছেন, ‘‘স্থূলতার সমস্যা থাকলেও ওজনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা জরুরি হৃদ্‌রোগের রোগীদের। এতে অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম থাকে।’’

এক দিকে যেমন ওজন বৃদ্ধি চিন্তার কারণ, তেমনই অতিরিক্ত ওজন কমাতে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ কঠোর শরীরচর্চা, ওষুধের প্রয়োগে দ্রুত মেদ ঝরানোর প্রবণতা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসক থেকে গবেষকেরা। মুখ্য গবেষক জুফেন ঝ্যাং বলছেন, ‘‘ দ্রুত ওজন কমাতে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত।’’

তবে পুষ্টিবিদ থেকে ফিটনেস প্রশিক্ষক—অনেকেরই মত, ওজন কমানো উচিত সময় নিয়ে। আচমকা খাওয়া কমিয়ে বা বাড়তি শরীরচর্চা করে দ্রুত মেদ ঝরানোর লক্ষ্যমাত্রা না রাখাই ভাল। ওজন কমাতে গেলে তা হওয়া উচিত নিয়ম মেনে এবং ধীরে।

Advertisement
আরও পড়ুন