মনখারাপ সামলানোর উপায় বলে দিলেন মনোবিদ। ছবি: সংগৃহীত।
অফিসের কাজ, ব্যস্ততা, বাড়ির দায়িত্ব, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি, বেতন পেয়েই নিজের জন্য চুটিয়ে কেনাকাটা করা— এত কিছুর মাঝেও এক ফাঁকে জাঁকিয়ে বসে মনখারাপ। মনের কোণে জমা হয় মেঘ। মনখারাপের নেপথ্যে যে সব সময় বড় কোনও কারণ থাকে তাও নয়, কিন্তু মনজুড়ে তখন শুধুই বিষাদ। মন যে কেন হঠাৎ হঠাৎ বিগড়ে যায়, কোথায় তার উৎস সে খোঁজা বড় কঠিন বিষয়। কিন্তু মনখারাপ হলে যখন চারিদিকে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হয়ে ওঠে তিস্তা, ঠিক সেই সময় কাউকে মনের খবর দিতে ইচ্ছা করে। শরীর খারাপের কথা যতটা অবলীলায় বলে ফেলা যায়, মনের ভালমন্দের কথা ঠিক সে ভাবে বলতে পারেন না অনেকেই। তবে মনখারাপের কথা প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে না পারলেও মনোবিদের কাছে মনের আগল খুলে দিয়েছেন অনেকেই। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলে তাঁদের মন ভাল করার চেষ্টা করেছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সপ্তাহের পর্ব ‘মন ভাল নেই! কী করে বলব?’
প্রতি পর্বের মতো এ পর্বেও অনেকেই মনখারাপের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। মনোবিদও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘‘আমার আজকাল কিছুই আর ভাল লাগে না। সাজতে ভাল লাগে না, ঘুরতে ভাল লাগে না, কারও সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে না। একা থাকলেও মোবাইল ঘাঁটতে ইচ্ছা করে না। আমি বিবাহবিচ্ছিন্নতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মায়ের মৃত্যুর পরে আমার একাকিত্ব, কষ্ট, ভাল না লাগা আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। মা আমার বন্ধু ছিলেন। খুব চেষ্টা করেছিলাম মাকে ভাল করে তোলার জন্য। কিন্তু পারলাম না। এখন মনে হয় ভাই, বোন কেউ থাকলে ভাল হতো। আর বন্ধুদের সঙ্গেও রোজ এক কথা বলতে ভাল লাগে না। ভাল থাকার রাস্তা পাচ্ছি না।’’
একই ধরনের বিষাদ ফুটে উঠেছে স্নেহর্পীর চিঠিতে। তিনি জানিয়েছেন, পরিবারে অনেক সময় অপমানের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। যা তিনি আজও ভুলতে পারছেন না। কিন্তু যত দিন পরিবারের বাইরেও অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, প্রেমের প্রতিও আর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।
এমন টুকরো টুকরো বহু মনখারাপের ছবি উঠে এসছে। মনোবিদ বলেন, ‘‘আসলে মন ভাল হবে কী করে, কেউই সেই প্রশ্নটি নিজেকে করছেন না। বরং কী কী হলে মনখারাপ হবে, আগে সেটার তালিকা তৈরি করে ফেলছি। যখন মন ভাল নেই, সেই সময় কী কী চাই না, তার একটা ছবি চোখের সামনে ফুটে উঠছে। কিন্তু কী কী চাই, তা নিয়ে ভাবছেন না কেউ। আসলে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একটা গভীর অতৃপ্তি কাজ করছে জীবন নিয়ে। কিছু জিনিস মনের মতো নেই। পরে কী হবে সেই ভেবে মুহূর্তে বাঁচতে ভুলে যাচ্ছি। সেটা করলে ভাল থাকা থেকে আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাচ্ছি আসলে। তাই এই মুহূর্তে যতটুকু ভাল আছে তা নিয়ে খুশি থাকা জরুরি।’’