Anuttama Banerjee

বিবাহিত সম্পর্কে ‘ভার্চুয়াল’ তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ কি এড়ানো সম্ভব? কী বললেন মনোবিদ?

‘লোকে কী বলবে’ এবং ‘কী করে বলব’র শেষ পর্বে আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুকের পেজে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিশেষ অতিথিরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১৭
Image of Anuttama Banerjee

—প্রতীকী ছবি।

নিছক মনের কথা শুনতে, আড্ডা দিতে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বছর দুই আগে আনন্দবাজার অনলাইনে শুরু হয়েছিল ‘লোকে কী বলবে’ এবং ‘কী করে বলব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শুরুর দিন থেকে সঙ্গে ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ পর্বগুলিতে অতিথিদের আসনও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনের জটিলতা কাটিয়ে আলোর পথে উত্তরণের উদ্দেশ্য নিয়ে যে নটেগাছটি ডালপালা মেলেছিল, এ বার তার মুড়োনোর সময় এসেছে। এ সপ্তাহে ‘লোকে কী বলবে’ এবং ‘কী করে বলব’র শেষ পর্বের শেষ অধ্যায়ে আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক পেজে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়, মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব ও আবির মুখোপাধ্যায় এবং মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার। প্রতিটি পর্বেই দর্শকরা নিজেদের মনের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকগুলিতে, গোপন কুঠুরিতে জমা হতে থাকা অভিমান, অভিযোগ, ব্যর্থতা, অধিকার নিয়ে মনোবিদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। নিজেদের প্রয়োজনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু মানুষও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন। প্রতিটি পর্বেই দর্শকেরা নিজেদের মনের গোপন কুঠুরিতে জমা হতে থাকা অভিমান, অভিযোগ, ব্যর্থতা, অধিকার নিয়ে মনোবিদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। নিজেদের প্রয়োজনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু মানুষও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন। আজ শেষ পর্বে কথা হবে তেমনই একটি বিষয় নিয়ে।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি লিখেছেন, “হঠাৎ এক দিন জানতে পারি বিবাহিত সঙ্গী ভার্চুয়ালি তৃতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। জানার পর থেকে স্বাভাবিক হতে পারছি না। আমি কলেজে পড়াই। বছর পাঁচেকের একটি সন্তানও রয়েছে। মাঝেমাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে চলে যাই। আমার মনোবিদ বলেছেন, এই সম্পর্ক তো ভার্চুয়াল। তাই চেষ্টা করলে এর সঙ্গে বোঝাপড়া করা যায়। সম্পর্ক ভার্চুয়াল বলে তার সঙ্গে আমাকে মানিয়ে নিতে হবে? উত্তর দিলেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। “এটা মনোবিদের দায়িত্ব নয়। সম্পর্ক যেমনই হোক, তার সঙ্গে কেউ বোঝা পড়া করবেন কি না বা মানিয়ে নেবেন কি না, তা মনোবিদের কাজ নয়। কারণ, সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায় না। তাই মানিয়ে নাও বলার মধ্যে এক সঙ্কীর্ণতা প্রকাশ পায়। যাঁর সঙ্গে সঙ্গী সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি শারীরিক ভাবে তিনি সামনে নেই। তার মানে তাঁর কোনও অস্তিত্ব নেই এমনটা কিন্তু নয়। মানসিক ভাবে সঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে সহবাস করছেন, তা জানতে পারলেও সমান কষ্ট হবে।”

মনোবিদের পরামর্শ যদি সমাধানের পথে চালিত না করে, সে ক্ষেত্রেই বা করণীয়? শ্রীময়ী বললেন, “এখানে নিজেকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। কোনটা আমার কাছে মেনে নেওয়ার মতো বিষয় আর কোনটা নয়, তা নিজেকেই ঠিক করতে হবে। ভার্চুয়াল সম্পর্কের গ্রহণযোগ্যতা কম বা সামনে হাত ধরে বসে থাকলেই তা গভীর সম্পর্কের উদাহরণ— সেই সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া কিন্তু মনোবিদ বা থেরাপিস্টের কাজ নয়। তবে সিদ্ধান্ত নিতে যদি কোনও সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে মনোবিদ সাহায্য করবেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগী নিজে যা শুনতে চান, তা তিনি মনোবিদের মুখে বসিয়ে ভেবে নেন।”

সম্পর্কের তো অনেক স্তর থাকে। শুধুমাত্র তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশেই যে সম্পর্কে আঘাত লাগে, এমনটা কিন্তু নয়। মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। “তৃতীয় কারও সঙ্গে অন্যত্র রাত না কাটিয়েও কিন্তু বিবাহিত সঙ্গীর কাছে তাঁর গুরুত্ব খর্ব হওয়ার হাজার একটা কারণ থাকতে পারে। তা-ও কিন্তু সম্পর্কে আঘাত আনে। আবার, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সঙ্গী বন্ধুত্ব পছন্দ করেন। তাই বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে জোর করে সঙ্গীর পছন্দগুলিকে নিজের বলে মানিয়ে নেওয়ার মধ্যেও কিন্তু সমস্যা রয়েছে। সঙ্গী পছন্দ করেন বলেই নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনাও সম্পর্ককে ছোট করা।” এ প্রসঙ্গে আবির মুখোপাধ্যায় বললেন, “প্রথমেই সমাধান খুঁজে দেওয়াটা পেশাদার থেরাপিস্ট বা মনোবিদদের কাজ নয়। সমাধানের পথ খুঁজতে সাহায্য করাই পেশাদার থেরাপিস্টের কাজ। পাশাপাশি, আরও একটা বিষয় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদারদের মাথায় রাখা উচিত নিজেদের ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে তোলা। উল্টো দিকের মানুষটিকে সাহায্য করতে গেলে আগে তাঁর সব কথা শুনতে হবে। জোর করে নিজের মত তাঁর উপর আমরা চাপিয়ে দিতে পারি না। পারস্পরিক কথা আদানপ্রদানের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement