ছবি: সংগৃহীত।
মা হওয়া মুখের কথা নয়। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখালেই মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং মায়েদের যুদ্ধটা শুরু হয় তার পর থেকেই। নিরন্তর এই যুদ্ধ কখনও কখনও একাই লড়তে হয় মায়েদের। কিন্তু মায়েরা তো হাল ছাড়েন না। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যান। সামনেই মাতৃদিবস। মায়েদের এই লড়াই উদ্যাপনের এমন বিশেষ দিন উপলক্ষে ‘লোকে কী বলবে’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব ‘একা মায়ের পথচলা’। আনন্দবাজার অনলাইনের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে মাতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে এর আগে কথা বলেছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই পর্বে মনোবিদ একা নন, উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী এবং উদ্যোগী স্বরলিপি ভট্টাচার্য। অভিনয়ের দুনিয়া থেকে কয়েক বছর হল নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে নিজেকে উদ্যোগপতি হিসাবেই পরিচয় করান তিনি। ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি একা হাতেই মেয়েকে বড় করে তুলছেন। মেয়ের যখন ১১ দিন বয়স, স্বামী ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকেই সন্তানকে গড়েপিঠে তোলার দায়িত্ব একার কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্বরলিপি। এই গোটা পর্বে প্রতিকূলতা যে আসেনি, তা নয়। বহু ঝড়ঝাপ্টার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। তিনি লড়ে গিয়েছেন নিজের মতো করে। একা হাতে সন্তান মানুষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও অনেকের মনেই সংশয় দেখা দিয়েছিল। এই ধরনের ভাবনা আসা যে একেবারে অবাস্তব, তা নয়। শুধু যে বাইরের লোকের মনে এই ভাবনার জন্ম হয় তা কিন্তু নয়। মায়ের মনেও একটা আশঙ্কা তৈরি হয়।
স্বরলিপিও কি ভয় পেয়েছিলেন শুরুতে? কোনও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তাঁর মনেও? মনোবিদ প্রশ্ন রাখলেন স্বরলিপির কাছে। স্বরলিপি বলেন, ‘‘সেই সময় অনেকে এমনটাই ভেবেছিলেন। দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন মনে দুটো চিন্তা আসে। হয় লড়তে হবে। নয়তো মরতে হবে। আমি লড়াইয়ের পথটাই বেছে নিয়েছিলাম। কারণ আমার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না। এ বার নিজে ভাল না থাকলে, পৃথিবীকেও ভাল রাখা সম্ভব নয়। ওই সময়ে আমি প্রতি দিন শুধু কাঁদতাম। আমার ক্যাফের কর্মীরা তার সাক্ষী রয়েছেন। এক দিকে মেয়ে অন্য দিকে ব্যবসা, কী করে সব সামলাবো ভেবেই কান্না পেত। শারীরিক ভাবেও তখন দুর্বল। মনও ভেঙে পড়েছে। মেয়ের কান্না, সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমি দেখলাম যে আমাকে শক্ত হতে হবে। কারণ কারও দয়া আমার চাই না। একা মা হলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হল শিশুর পদবি। কেন যে মায়ের পদবি সন্তান ব্যবহার করতে পারবে না, বুঝতে পারি না। আমি জন্ম দিয়েছি, আমি বড় করছি, তাহলে আমার পদবি কেন নয়?’’ প্রশ্ন তুললেন স্বরলিপি।