Anuttama Banerjee

স্বাধীনতা পেয়েও স্বাধীন হওয়া হল কই? আলোচনায় মনোবিদ অনুত্তমা

‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ‘স্বাধীন হতে ভয় করে!’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ২০:১৭
লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা

লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা —ফাইল চিত্র।

একটা বয়সের পর সকলেই স্বাধীন হতে চান। কতটা পড়াশোনা করব, কী নিয়ে পড়াশোনা করব, রাজনৈতিক মতবাদ কী হবে, কার সঙ্গে প্রেম করব— এই সব বিষয় অন্য কেউ কেন বলে দেবে? সব সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চাই বটে, তবে পারি কি? যখন উল্টো দিকের মানুষরা বলে দেন, তুমি যা ভাল বোঝো তা-ই করো, তখন ভীষণ ভয় লাগে। সর্ব ক্ষণ মনে হতে থাকে, এ বার তো সব সিদ্ধান্তের দায়ভার আমারই হবে। আমরা স্বাধীনতা চাই বটে, তবে স্বাধীন হতে ভয়ও পাই। সেই সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘স্বাধীন হতে ভয় করে!’

Advertisement

যখন সত্যিই সমস্ত সিদ্ধান্ত আমাদের একার উপরে এসে বর্তায়, সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কেউই থাকে না, তখন কিন্তু অনেকেই দোলাচলে ভুগতে থাকি। আমরা কতটা স্বাধীন হতে চাই আর কোথায় গিয়ে দ্বন্দ্বের মুখে পড়ি, সেটা বুঝতে পারা ভীষণ জরুরি। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন, ‘‘দশম শ্রেণির পর কী নিয়ে পড়ব, তা নিজেই বেছে নিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে অবশ্য সেই বিষয়ে একেবারেই ভাল ফল করতে পারিনি। আমার এই স্বাধীনচেতা মনোভাবকে তখন থেকেই পরিবার বিরোধিতার খাতায় ফেলে দিয়েছে। আমি এখন যদি নতুন করে কিছু করতে চাই, যা আমার মনে হয় আমার জন্য ঠিক, তাতে আর পরিবারকে পাশে পাই না। এর ফলে নিজের মনের মধ্যেও সংশয় তৈরি হচ্ছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় খালি মনে হয়, আবার যদি ভুল করে বসি! পরিবারের সঙ্গে মতভেদ হবে না, আবার আমি স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্তও নিতে পারব, এমনটা কি কখনই হবে না?’’

এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের পরিবার সর্বদা পাশে থাকে। জয়িত্রী লিখেছেন, ‘‘১৫ বছর বয়স থেকেই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার স্বাধীনতা বাড়ির লোক আমায় দিয়েছেন। কোথায় যাব, কী পরব, সব নিজে ঠিক করতাম। বিয়েটাও সেই ভাবেই খেলার ছলেই করে ফেলছিলাম। মনে হয়নি যে, বাড়িতে জানিয়ে হ্যাঁ কিংবা না আলাদা করে শুনি। তখনও আমার বাপি বলেছিল, আমার মেয়ে যা করছে, নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই করছে। আজ ৩৭ বছর বয়সে যখন দুই সন্তানের মা হয়ে সব সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলকভাবে আমাকেই নিতে হয়, তখন কিন্তু ভয় করে। কেউ যদি একটু বলে দিতেন, এটা কোরো না কিংবা ওটা করো, তা হলে বোধ হয় ভাল হত।’’

স্বাধীন হতে চাওয়া এবং হতে চেয়েও কোথাও হতে না পারার দ্বন্দ্ব অনেকের মনের ভিতরেই চলতে থাকে। আমরা কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে ভয়ও ভাই। কিছু ক্ষেত্রে পরিবারে সক্রিয় ভূমিকা থাকে ভয় পাওয়ানোর ক্ষেত্রে, কিছু ক্ষেত্রে আবার পরিবার পাশে থাকলেও আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারি না। অনুত্তমা বললেন, ‘‘যাঁদের পরিবারে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণের পরিবেশ থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্য রকম। অনেক বাড়িতেই অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত সন্তানকে তাদের সব কথা মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। অনেকের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলেও বাবা-মায়েরা বলেন, ‘আমাদের চোখে ও কোনও দিনও বড় হবে না।’ একটু ভেবে দেখুন তো, এই উক্তিতে ভালবাসা প্রকাশ পায়, নাকি অধিকারবোধ? সব সম্পর্কেই অধিকারবোধ আসে। তবে যাঁকে ভালবাসছেন তাঁর উন্নতিতে যেন আপনি বাধা হয়ে না দাঁড়ান, সেটা তো আগে দেখতে হবে। তাঁকে আগলে রাখার নামে আটকে রাখছেন না তো? অনেক বাবা-মা-ই সন্তানের উপর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন, জোর করে তাঁকে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসতে বলা হয়— তাতেও তো অনেক সময়ই নম্বর কম হয়। কার সিদ্ধান্তে বিষয় নির্বাচন করেছেন, তার থেকেও বেশি জরুরি কতটা পড়াশোনা করেছি আমরা। অনেক সময় পড়াশোনা করলেও পরীক্ষার হলে ঘাবড়ে গিয়ে কিছুই লিখতে পারেন না অনেকে, এমনটাও স্বাভাবিক। তাই পরীক্ষার নম্বর ভাল পাওয়া কিংবা না পাওয়া নিয়ে কারও বিষয় নির্বাচন ঠিক কি ভু্‌ল, তা বিচার করা মোটেও ঠিক নয়। একটি সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে বলে সারা জীবনে সে সব সিদ্ধান্তই ভুল নেবে, এমনটাও ভাবার কোনও কারণ নেই। অভিভাবকদেরও ভাবা উচিত, তাঁদের নেওয়া সব সিদ্ধান্তের পরিণতিই কি তাঁদের মনের মতো হয়? আপনার দেখানো পথে চললেই ছেলেমেয়ের ভাল হবে, এমনটা ধরে নেওয়াও কিন্তু ঠিক নয়। সন্তান যেন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, সেই দিকে তাকে প্রস্তুত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, নিজের উপর নির্ভরশীল করাটা কিন্তু ঠিক নয়। সন্তানদেরও উচিত নিজেদের সিদ্ধান্তগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসা। সেই সিদ্ধান্ত ঠিক কি না, তা সবার আগে নিজেকে বোঝান, পরিবার তো তার পরে আসবে। নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত যে ঠিক, তার সাপেক্ষে যুক্তিগুলি নিজের কাছে ঠিক থাকলে পরিবারেরও সমর্থন পেতে অসুবিধা হবে না। প্রয়াসটা চাই দুই তরফের।’’

আরও পড়ুন
Advertisement