Viral Fever

তাপমাত্রার তারতম্যে ভাইরাসের প্রকোপ, জ্বর-সর্দি-কাশিতে কাবু আমজনতা

সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেরই বহির্বিভাগ এবং চিকিৎসকদের চেম্বারে গত কয়েক দিনে ভিড় বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের। মিলছে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২৫

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তীব্র গরমের দোসর হয়েছে বিভিন্ন অসুখ। কারও টানা কয়েক দিন ধরে জ্বর। কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগছেন। কারও আবার পেটের গোলমাল লেগেই রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি মানুষের উদাসীনতার কারণেই এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

Advertisement

সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেরই বহির্বিভাগ এবং চিকিৎসকদের চেম্বারে গত কয়েক দিনে ভিড় বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের। মিলছে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীও। চিকিৎসকেরা বলছেন, সবই গরমের জেরে। কারণ, সব সময়েই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছু অসুখ মাথাচাড়া দেয়। চৈত্রের শেষে কিছু দিন প্রচণ্ড গরমে কাহিল ছিল আমজনতা। তার মধ্যে আচমকাই বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়। তখন গরম থেকে কয়েক দিন মুক্তি মিললেও পরে গরমে অসুখের প্রকোপ আরও বেড়েছে বলে মত চিকিৎসকদের। মেডিসিনের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘বেশ গরম ছিল, তার মধ্যে আচমকাই বৃষ্টির জন্য তাপমাত্রা নেমে গেল। তাপমাত্রার এই তারতম্য ভাইরাস ও ব্যাক্টিরিয়ার জন্য আদর্শ। তাতেই আক্রান্ত হচ্ছেন সকলে। জ্বরে আক্রান্তদের তাপমাত্রা ১০১-১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। সঙ্গে গলা ব্যথা, মাথার যন্ত্রণাও থাকছে।’’

সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, তাপমাত্রার তারতম্যের সময়ে করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনো, আরএস, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেটানিমোর মতো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। তার জন্যই শ্বাসনালির উপর ও নীচের অংশ সংক্রমিত হচ্ছে। এই কারণে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। যোগীরাজ বলেন, ‘‘টানা তিন থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকছে। কারও আবার জ্বর কমলেও টানা ১৫-২০ দিন শুকনো কাশিতে ভুগছেন। তবে জ্বর-কাশি-সর্দি হলে প্রথমেই নিজের মতো করে দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া যাবে না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, টানা জ্বর থাকলে এবং কাশির সঙ্গে গাঢ় কফ উঠলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে। আর ডায়েরিয়ার সঙ্গে জ্বর না এলে কখনওই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আর্দ্রতার কারণে ঘাম বেশি হচ্ছে। এ বার সেই অবস্থার মধ্যে হঠাৎই অনেকে এসিতে গিয়ে ঢুকছেন। কেউ আবার গরম থেকে এসেই ঠান্ডা জল খেয়ে নিচ্ছেন। তাতে গলায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, পরিবেশে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে শ্বাসতন্ত্রে থাকা স্থানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা ঘেঁটে যায়। তিনি বলেন, ‘‘সারা বছর ধরে যে ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়াগুলি পরিবেশে থাকলেও কোনও সমস্যা করে না, তাপমাত্রার তারতম্যের সময়ে সেগুলি শরীরে ঢুকে প্রথমে গলায় সংক্রমণ তৈরি করে। তার পরে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।’’ জানা যাচ্ছে, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার মতো আবহাওয়ার ‘স্থিতিমাপ’ বা ‘প্যারামিটার’ মানুষের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। শরীরের কাজ হল, সেই সব পরিবর্তন মানিয়ে চলা।

কিন্তু সকলের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সমান হয় না। তাতে শারীরবৃত্তীয় ‘স্ট্রেস’ তৈরি হয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরাস বিষয়ক গবেষক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, ওই স্ট্রেসের কারণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। তাতে ‘ইমিউনো-সাপ্রেশন’ হয়ে শরীরে নিউট্রোফিল, ম্যাক্রোফাজ, লিম্ফোসাইট, ন্যাচারাল কিলার সেল, ডেনড্রাইটিক কোষের কার্যকলাপ তথা অ্যান্টিবডি ও সাইটোকাইনের মতো জৈব-অণু তৈরি এবং জোগানে ভাটা পড়ে।

সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘এর জেরে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণে আমাদের শরীর কাবু হয়। ত্বক, শ্বাসনালি ও খাদ্যনালিতে বসবাসকারী আপাতনিরীহ, সুযোগসন্ধানী জীবাণুরাও এই সময়ে দাদাগিরি শুরু করে দেহ-কোষকে আক্রমণ করে। ওই জোড়া উপদ্রবে শরীর দুর্বল হয়।’’ চিকিৎসকদের মতে, তার কারণেই কাশি-সর্দির মতো উপসর্গ বহু দিন ধরে প্রলম্বিত হচ্ছে। এমনকি, সামান্য ঠান্ডা লাগলেও শরীর খারাপ হচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement