Doors

নিরাপদ, টেকসই, নান্দনিকও

এখন বাড়ির সদর দরজায় কাচ, গ্রিল, কাঠ দিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করা যায়

Advertisement
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২০

ছোটবেলায় বেড়াতে গিয়ে শোনা একটা কথা এখনও মনে গেঁথে আছে— হোটেলের ঘর কেমন হবে, তা তার রিসেপশনের চেহারা দেখে বোঝা যায়। কিছু ব্যতিক্রম হলেও মিলিয়ে দেখেছি, কথাটা মোটের উপর সত্যি। ঠিক তেমনই, নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটটিকে যিনি অতি যত্নে সাজিয়েছেন, সোফা থেকে কিচেনের মেঝে অবধি সব কিছুতেই যেখানে নান্দনিকতার ছোঁয়া লেগে আছে, তিনি কিছুতেই প্রবেশদ্বারটিকে যেমন-তেমন রেখে দিতে পারেন না। তাই, দরজা দেখে ভিতরের সজ্জা এবং বাসিন্দাদের রুচির বেশ খানিকটা আন্দাজ মেলে বইকি।

সাবেক

Advertisement

আগেকার দিনে প্রবেশ দ্বারের ক্ষেত্রে শৌখিনতার চেয়ে ঢের বেশি জোর দেওয়া হত নিরাপত্তার দিকটিতে। তাই খিল লাগানো শক্ত কাঠের ভারী দরজা, আর তাতে তালা লাগানোর লোহার মোটা কড়ার ব্যবস্থাই সাধারণত দেখা যেত। অনেক সময়ে তাতে ইংরেজি ‘জ়েড’-এর মতো করে লাগানো থাকত কাঠের মোটা তক্তা, যাতে চট করে দরজা ভাঙা সম্ভব না হয়। সেই ধাঁচ অনেক পাল্টালেও, কাঠের মজবুত দরজার প্রতি আস্থা এখনও অনেকের মনেই অটুট। বেশির ভাগই দেখা যায়, দেওয়ালে প্যানেল করে সিঙ্গল ডোরের চল। তার গায়ে হরেক নকশা। অনেকে শখ করে কাঠের ডাবল ডোরের ব্যবস্থাও করে থাকেন। আগেকার দিনে বাড়িতে ঢোকার মূল দরজা সাধারণত দু’পাল্লারই হত। সেই ব্যাপারটাই এ-কালের ফ্ল্যাটের সজ্জায় তুলে আনতে হলে ডাবল ডোরের চার পাশে ব্রিক প্যাটার্নের টেক্সচার্ড ওয়াল-এর ব্যবস্থা করা যায়।

ডাচ ডোর

এ-হেন দরজার দু’টি অংশ। তাই একে হাফ ডোরও বলা যায়। সম্পূর্ণ দরজা না খুলে এর উপরের অংশটিকে জানালার মতো আলাদা ভাবে খোলা যায়, নীচের অংশটি সেই সময় বন্ধই থাকে। সুবিধে হল, এতে জিনিসপত্র ডেলিভারি নিতে বা দরজার ও-পারে থাকা মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে পুরো দরজা খোলার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণত উপর আর নীচের অংশের ডিজ়াইনও ভিন্ন হয়। উপরের অংশে ছোট ছোট ফ্রেমে কাচ বসিয়ে নীচের অংশটিকে সলিড কাঠের বানানো হয়।

গ্লাস ডোর

প্রধান দরজা কাচের করার প্রবণতা হালফিলে অনেকটাই বেড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ঢোকার জায়গা এবং দরজার পিছনের ড্রয়িং এরিয়া যথেষ্ট চওড়া হলে গ্লাস ডোরের আভিজাত্য খুলবে ভাল। কারণ, খাঁটি ফ্রেঞ্চ ডোর অনেকটা চওড়া, প্রায় একটা দেওয়াল জুড়ে বানানো হয়। অনেকে চওড়া প্যানেলের মাঝের অংশটুকুতে স্লাইডিং ডোরের ব্যবস্থা করেন। তবে, ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রবেশপথটি ছোট হওয়ায় সেখানে ফ্রেঞ্চ ডোর বানানো সম্ভব নয়। তাই মূল দরজাটি কাঠ বা অ্যালুমিনিয়াম আর কাচের তৈরি করে ব্যালকনির ক্ষেত্রে ফ্রেঞ্চ ডোরের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে, দরজা কাচের হলে তার যত্নআত্তির ব্যাপারে একটু বেশিই সজাগ হতে হয়। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও থাকে। টাফেনড গ্লাস ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

গ্রিল-কাঠের যুগলবন্দি

যাঁরা কাঠের দরজাকেই একটু অন্য ভাবে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই আইডিয়া মন্দ নয়। এতে মূল দরজাটি কাঠেরই তৈরি। শুধুমাত্র দরজার একটা সাইড অথবা মাঝের অংশটুকু খোলা রেখে তাতে গ্রিল দিয়ে নানা রকম নকশা করা যায়। অনেকে শুধুমাত্র সাবেক গ্রিলের নকশাই এ ক্ষেত্রে বেছে নেন, আবার কেউ কেউ কাচ আর গ্রিল দিয়েও নকশা ফুটিয়ে তোলেন। তবে এখানে মূল দরজাটায় সিম্পল লুক রাখা চাই। নিরাপত্তার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে হলে কাঠের দরজার বাইরে আর একটা কাঠ-জালির দরজা লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে শৌখিনতাও বজায় থাকবে, ডাবল ডোরের কাজও হবে।

তবে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে প্যানেলড ডোরের আইডিয়া। এতে কোনও একটিমাত্র কাঠ নয়, বরং আয়তাকার, বর্গাকার-সহ কয়েকটি কাঠের টুকরোকে একত্রে জুড়ে দরজা তৈরি হয়। যেমন, একটি সিক্স প্যানেল ডোরের ক্ষেত্রে ছ’টি কাঠের প্যানেল জুড়ে দরজা তৈরি হবে। কনটেম্পোরারি আর্কিটেকচারের অঙ্গ হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ডোরও যথেষ্ট জনপ্রিয়। সুবিধে হল, এগুলি দেখতে সুন্দর, নিরাপদ এবং খুব বেশি যত্নআত্তি ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী হয়।

তবে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মূল দরজা ডিজ়াইনের দিক থেকে যেমনই হোক না কেন, নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান। একই সঙ্গে দেখতে হবে তা যেন টেকসইও হয়। বিশেষত প্যানেলড ডোরের ক্ষেত্রে দেখে নেবেন কাঠের গুণমান যেন ভাল হয়। দরজার উপরে গোটা অন্দরমহলের আব্রু রক্ষার দায়িত্ব। কেতাদুরস্ত করতে গিয়ে সেই লক্ষ্য যেন সরে না যায়।

আরও পড়ুন
Advertisement