করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশেই ব্যবহার করা হচ্ছে আইভারমেক্টিন। ফাইল চিত্র
আইভারমেক্টিন ওষুধটি বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। করোনা যখন প্রথম শুরু হয়, তখন তো টিকা আসেনি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বলে একটি ওষুধ খাচ্ছিলাম। পরের দিকে সকলেই আইভারমেক্টিন খেতে শুরু করি। অন্যদেরও বলি। এই ওষুধ আগাম খেলে করোনা আটকানো যাবে, এমন নয়। কিন্তু করোনায় সংক্রমিত হলে ক্ষতি খানিক কম হতে পারে। তুলনামূলক ভাবে কম উপসর্গ দেখা দেবে। সংক্রমণের তীব্রতা কম হবে।
গত এক-দেড় বছরে বিভিন্ন দেশে আইভারমেক্টিন নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র বেরিয়েছে। গত সপ্তাহে সেই সব গবেষণাপত্রের তথ্য একত্রে এনে একটা সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আইভারমেক্টিন কিছুটা হলেও করোনা সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করে। ফলে করোনা হওয়ার আগেও দেওয়া যায়। আর করোনার চিকিৎসায় তো এখন দেওয়া হচ্ছেই।
করোনা হলে প্রাথমিক যে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তার মধ্যে আইভারমেক্টিন অবশ্যই থাকে। শুধু আমাদের দেশ নয়, বিভিন্ন দেশেই এমনটা হচ্ছে। এ দেশে সরকারি ভাবে যে চিকিৎসার পদ্ধতি ঘোষিত হয়েছে, তার মধ্যেও ওষুধটি রয়েছে। এটি মূলত কৃমির ওষুধ। তবে দেখা গিয়েছে, এটি কোভিড ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে পারে। সংক্রমণের শুরুতে পাঁচ দিন পরপর খাওয়ালে ভাইরাল লোড অনেকটাই কমে আসে। সামগ্রিক বিশ্লেষণটি প্রকাশিত হওয়ার পরে এই ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা আবার বাড়ছে।
গোয়া সরকার ইতিমধ্যেই ১৮ বছরের উপরে সকলকে এই ওষুধ খেতে বলেছে। এমনটা যদি এ রাজ্যেও নিজেদের মতো করে খেতে থাকেন অনেকে, তাতে কি অসুবিধা হবে? এই প্রশ্ন অনেকের কাছ থেকে পাচ্ছি। এতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই ওষুধের দু’রকম ডোজ হয়। এক, যাঁদের শরীরে ইতিমধ্যেই করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য পরপর পাঁচ দিন ১২ মিলিগ্রাম করে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। আর দ্বিতীয় ডোজ হল সমক্রমণ প্রতিরোধের জন্য। তার নিয়ম একটু আলাদা। এ ক্ষেত্রে প্রথম ওষুধ যদি আজ খাওয়া হয়, দ্বিতীয়টি খাওয়া হবে ৭ দিনের মাথায়। তার পরেরটি খেতে হবে ৩০তম দিনে। এর পরের ওষুধগুলি খাওয়ার নিয়ম এক-এক জনের ক্ষেত্রে এক-এক রকম। যাঁরা বাড়িতেই থাকেন, তাঁরা মাসে একটা করে খাবেন। যাঁরা কাজে বেরোন নিয়মিত, তাঁরা দু’সপ্তাহে একটা করে খাবেন। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো মানুষ, যাঁদের ঝুঁকি অনেক বেশি, তাঁদের খেতে হবে সপ্তাহে একটা করে। এমন নিয়ম মেনে আগে থেকেই এই ওষুধ খাওয়া হচ্ছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে অন্য ক্ষেত্রে। অনেকের কাছেই শুনছি, স্থানীয় ওষুধের দোকানে আইভারমেক্টিন পাওয়া যাচ্ছে না। খেয়াল রাখতে হবে যে, যাঁরা সংক্রমিত, তাঁদের জন্য ওষুধ পাওয়া জরুরি। এখন যদি সকলেই আইভারমেক্টিন কিনতে শুরু করেন, তবে সঙ্কট দেখা দেবে। এই ওষুধ খেলেই যে করোনা হবে না, এমন নিশ্চয়তা তো নেই। সে কথা মনে রাখা দরকার। টিকা দেওয়ার পরেও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে, আর এই ওষুধ কী ভাবে আটকাবে!
(লেখক বিশিষ্ট চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ)