COVID-19

কোভিড সারলেও থাকতে পারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, গবেষণা বলছে জটিল সমস্যার কথা

বিজ্ঞানীরা কিছু অ্যান্টিবডি সম্পর্কে বলছেন, এরা শরীরের পথভ্রষ্ট যোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এরা লড়াই থামায় না।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৪
কোভিডের প্রভাব সুদূরপ্রসারীও হতে পারে।

কোভিডের প্রভাব সুদূরপ্রসারীও হতে পারে।

করোনার কারণে পরবর্তী সময়ে শরীরে বহু রকম সমস্যা হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এর পাশাপাশি উঠে আসছে আরও একটি তথ্য। কোভিডের কারণে শরীরে তৈরি হতে পারে এমন অ্যান্টিবডি, যা রোগীর নিজের শরীরকেই আক্রমণ করতে পারে।
আমেরিকায় হালে কিছু সংখ্যক রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ধরন নিয়ে গবেষণার সময় বিষয়টি নজরে আসে চিকিৎসকদের। দেখা যায়, তাঁদের শরীরে এমন কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ভাবে শরীরেরই থেকে যাচ্ছে। কোভিড সেরে যাওয়ার পরে সেই সব অ্যান্টিবডি শরীরের অন্য কোষ বা অঙ্গকে আক্রমণ করছে। বিজ্ঞানীরা এই সব অ্যান্টিবডি সম্পর্কে বলছেন, এরা শরীরের পথভ্রষ্ট যোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এরা লড়াই থামায় না। উল্টে শরীরকেই আক্রমণ করে।
এই দাবি কতটা সত্যি? কোভিডের কারণে এমন সমস্যা হবেই, তেমন কোনও প্রমাণ এখনও না থাকলেও চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যাঁদের ইতিমধ্যেই অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা অতিরিক্ত বিপদ ডেকে আনতে পারে।’’ তাঁর মতে, রোগপ্রতিরোধের জন্য শরীর এক ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে। যার নাম সাইটোকাইন। কোনও কোনও মানুষের ক্ষেত্রে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়া প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে যায়। তাঁদের শরীরে বিপুল মাত্রায় সাইটোকাইন তৈরি হতে থাকে। যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ বা ‘সাইটোকাইন ঝড়’ বলা হয়।
কী হয় সাইটোকাইনের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকখানি বেড়ে গেলে? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, ‘‘যাঁদের অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকে, তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বুঝতে পারে না, কোনটা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, আর কোনটা বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকারক প্রোটিন। ফলে এই বিপুল সাইটোকাইন তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রোটিনকে আক্রমণ শুরু করে। অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ক্ষতিও হতে থাকে।’’
কোভিড কী ভাবে এই পরিস্থিতিকে আরও বিগড়ে দেয়? সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, করোনাভাইরাস যখন শরীরে ঢোকে, তার প্রোটিনকে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা চিহ্নিত করে আক্রমণ করে। কিন্তু অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকলে শরীরের বিপথে চালিত সাইটোকাইনগুলো বুঝতে পারে না কোনটা প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কোনটা ক্ষতিকারক। ফলে নতুন প্রোটিনের মুখোমুখি হয়ে তারা আরও নিয়মবিরুদ্ধ আচরণ শুরু করে।
টিকা এ ক্ষেত্রে কতটা কাজে লাগতে পারে? সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, ‘‘যখন করোনার টিকা দেওয়া হবে, তখনও বাইরে থেকে নতুন প্রোটিন শরীরে ঢোকানো হবে। তখন অটোইমিউন ডিসঅর্ডার আছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে শরীর সেই নতুন প্রোটিনকে কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে।
তবে চিকিৎসকদের কথা থেকে পরিষ্কার, কোভিড তেমন কোনও অসুখ নয়, যা সেরে যাওয়ার পর তার আর কোনও প্রভাব থাকবে না। বরং উল্টোটাই। একবার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রেই তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে যাওয়ার আশঙ্কা শরীরে। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই একে ‘লং কোভিড’ বলতে শুরু করেছেন। কারও ক্ষেত্রে তা টের পাওয়া যাবে প্রকট ভাবে, কারও বা প্রচ্ছন্ন।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement