বাবা হিসাবে কেমন শোভন চট্টোপাধ্যায়? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাবা হওয়া শুধু দায়িত্বের কিংবা আনন্দের নয়।
যন্ত্রণারও।
কথা বলতে বলতে থামলেন। রোজের নিয়মের ২০টি ইন্ডিয়া কিংসের একটি সিগারেটে হাত চলে গেল তিন সন্তানের বাবার। বললেন, ‘‘যন্ত্রণাটা সহজে বোঝা যায় না। অন্তত দেখা তো যায়ই না!’’
মেয়র, মন্ত্রী, নেতা, এমনকি স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কম চর্চা হয়নি। কিন্তু তার বাইরেও তাঁর একটি বড় পরিচয় আছে, যা নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। তিনি তো পিতাও।
এক সময়ে নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি তিন সন্তানের বাবা’। বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভনবাবুর সেই উক্তি। তত দিনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে চর্চা উঠেছে চরমে। তা ঘিরে পারিবারিক টানাপড়েন বেড়েছে ঢের। স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনবাবুর দুই সন্তান। সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় এবং সুহানি চট্টোপাধ্যায়। বৈশাখীর মেয়ে রিলিনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার মধ্যেই নিজের আর এক কন্যা বলে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন। তা নিয়েই হইচই। তা সামাল দেওয়ার চেষ্টাও করেননি। বরং আরও বেশি করে তাকে আগলে রেখেছেন। এখন সেই রিলিনা, মহুল যার ডাকনাম, তাকে নিয়েই সংসার। শোভনবাবু বলেন, ‘‘অনেক না পাওয়া বা সমস্যাকে সামলে দেয় মহুলের উপস্থিতি।’’ সস্নেহেই বলে চলেন, ষষ্ট শ্রেণিতে পড়া ছোট মেয়ের কথা। মহুল তাঁকে ‘দুষ্টু’ বলে ডাকে। সম্পর্কটাও তেমনই। মা, বৈশাখীকে আড়াল করে, মাঝেমধ্যে দু’জনে মিলে ‘দুষ্টুমি’ করেন। বাবা বলেন, ‘‘মহুল এখনও বন্দ্যোপাধ্যায় বটে, তবে কখনও যেন ও চট্টোপাধ্যায় লিখতে পারে, সে ইচ্ছাও আমার আছে।’’
তবে সপ্তর্ষি আর সুহানির কথা যখন-তখন মনে পড়ে এই বাবার। শোভনবাবু বলেন, ‘‘নিজেদের ঝামেলার মধ্যে সন্তানদের জড়ানো ঠিক না। ওরা জড়়িয়ে গেল। সেটাই খারাপ লাগে।’’ কোর্ট-কাছারির টানাপড়েনে পুত্র-কন্যার সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব তৈরি হল কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের। পিতা শোভন থামতে পারেন না। বলেন, ‘‘ওরা যেখানেই থাক, আমার ভাবনা তো থাকেই।’’ সন্তান যে ভাবেই দেখুন না কেন বাবাকে, পিতার কি আর দূরত্ব বাড়ানো সাজে! খানিকটা যেন তেমন কথাই বলে দিলেন আলোচনার ফাঁকে।
কথার পিঠে কথা আসে। কখনও সুহানি আসেন আলোচনায়, কখনও আসে রিলিনা। ‘‘বাবা হওয়ার দায়িত্ব, আনন্দ তো আছেই, কিন্তু বাবা হওয়া যন্ত্রণারও,’’ বলে ফেলেন শোভনবাবু। বলতে গিয়ে কি চোখের কোণটা একটু চিকচিক করে উঠল এই বাবার? নানা স্রোত সামাল দেওয়া অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের দেখে, সে সব ধরে নেওয়া অনেকেই ঠিক মনে করেন না। কিন্তু সন্তান ‘কার্টুন’ পর্যন্ত বলেছেন এই বাবাকে। সে খারাপ লাগা প্রকাশও করে ফেলেন বিশেষ কোনও জটিলতার প্রসঙ্গে না ঢুকেও।
বাবারা আবার বাবা-ই হন। দুনিয়ার বহু দুঃখকে ছাপিয়ে আসলে ছেলের হাতের ট্যাটুটাই বেশি ভাবায় শোভনবাবুকে। বলেন, ‘‘ওগুলো আমার একেবারেই পছন্দ নয়।’’ ছেলের সঙ্গে রাগারাগি, মন কষাকষি, সব কিছুই যেন ট্যাটুর বিরক্তির তুলনায় গৌণ। এ সব শুনে হেসেই ফেলেন সঙ্গিনী বৈশাখী। এ বার মুখ খোলেন। জানান, পিতা শোভনকে আলাদা জায়গা দেন তিনি। তবে তাঁর ক্ষেত্রে ট্যাটুর বিষয়টিও আলাদা। বলেন, ‘‘দুনিয়ায় যা-ই ঘটে যাক না কেন, শোভনের কাছে ছেলেমেয়েরা আলাদা। সব কাজ ছেড়ে ওদের জন্য ছোটাছুটি করতে দেখেছি প্রয়োজনে।’’
শোভন কি তবে খুবই উদার বাবা? প্রশ্নটি লুফে নেন বৈশাখী। বলেন, ‘‘উদার হলেও কড়া। ট্যাটুর কথা শুধু জানলেন, এমন কিন্তু আরও বেশ কিছু জিনিস আছে, যা এখনকার ছেলেমেয়েদের পছন্দ এবং শোভন সে সব বিষয়ে একেবারেই রক্ষণশীল বাবা।’’