Kartik Aaryan in Chandu Champion

মেদ ঝরিয়ে, পেশি বানিয়ে কার্তিক হলেন চন্দু, তাঁর খাওয়া থেকে ব্যায়াম, সব ফাঁস করলেন প্রশিক্ষক ত্রিদেব

‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ ছবির পোস্টারে কার্তিক আরিয়ানের শারীরিক পরিবর্তন চোখে পড়ছে অনেকেরই। পোস্টারের ছবিতে আদুর গায়ে তাঁকে দেখে প্রায় চেনাই যাচ্ছে না। কী ভাবে সম্ভব হল এই পরিবর্তন? এই ছবির জন্য তাঁর ফিটনেস প্রশিক্ষক ত্রিদেব পাণ্ডের সঙ্গে কথা বলে জানল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement
শ্রাবন্তী চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:৫৭
How did Kartik Aryan get into shape for new film Chandu Champion, fitness trainer shares his experience

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

১৪ই জুন কার্তিক আরিয়ানের ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা। ছবির পোস্টারে যেটা প্রথমেই চোখে পড়ে, তা হল কার্তিকের শারীরিক রূপান্তর। কিন্তু এর পিছনে এক জনের প্রধান অবদান। তিনি বেনারসের ছেলে, ত্রিদেব পাণ্ডে।

Advertisement

বেনারস থেকে মুম্বই সফর

বেনারসের ছেলে ত্রিদেবের পরিবারে প্রায় সবাই ভারতীয় রেলে কর্মরত। একটা সময় ছিল, যখন ত্রিদেবের সামনেও এ রকমই একটা প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু ত্রিদেব সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। ত্রিদেব প্রখ্যাত ফিটনেস গুরু বেনারসেরই ছোটেলাল ভাইকে গুরু মানেন। ২০১৪-র শুরুতে ত্রিদেব মুম্বই আসেন। জাতীয় স্তরে ২৭টি বক্সিং ম্যাচ খেলেছেন এবং ঠিক ৪ বছর আগে মুম্বইয়ের জুহু এলাকায় ‘নাইস অ্যান্ড ইজ়ি ফিটনেস স্টুডিয়ো’ শুরু করেন। গত কয়েক বছর ধরে রাজকুমার রাও, সানিয়া মালহোত্র, সানি সিংহ, শ্বেতা ত্রিপাঠী, গৌহর খান, বিক্রান্ত ম্যাসির মতো তারকাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ত্রিদেব। তিনি বলেন, ‘‘কবীর খানের টিম যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন আমি আমার কিছু ট্রেনিংয়ের ভিডিয়ো পাঠাই। সেগুলি দেখেই আমাকে কার্তিক আরিয়ানের ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমার দায়িত্ব ছিল কার্তিককে পেশাগত বক্সিং শেখানো। কার্তিক ছবিতে ৫টি বক্সিং ম্যাচ লড়েছে, সেটাও পেশাদার বক্সারের সঙ্গে।’’

How did Kartik Aryan get into shape for new film Chandu Champion, fitness trainer shares his experience

কার্তিকের সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর শেখার ক্ষমতা। ছবি: সংগৃহীত।

কার্তিক কেমন ছাত্র?

কার্তিকের সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর শেখার ক্ষমতা। এমনই বলছে ত্রিদেবের অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারেন কার্তিক। বক্সিংয়ের ফুটওয়ার্ক কার্তিক খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করেছিলেন। ‘ফ্রেডি’ ছবির সময়ে কার্তিককে ওজন অনেক বাড়াতে হয়েছিল, তাই সবচেয়ে আগে যেটা করণীয় ছিল, সেটা হল কার্তিকের ওজন কমানো। ত্রিদেব বলেন, ‘‘আমরা যখন ট্রেনিং শুরু করি, তখন কার্তিকের বডি ফ্যাট ছিল ওজনের ৩৭ শতাংশ, যেটা মোটা হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত। ট্রেনিংয়ের শেষে বডি ফ্যাট ৭ শতাংশে চলে আসে। ড্রাগ বা কোনও রকম ডোপিং ছাড়াই কার্তিক আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন। এক জন জাতীয় স্তরের বক্সার হয়ে আমি কার্তিকের এই অঙ্গীকারবদ্ধতাকে সম্মান করতে বাধ্য হচ্ছি। ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’-এর জন্য যখন আমরা কাজ শুরু করি, কার্তিকের ওজন ছিল ৯০ কেজি। ‘ওয়ার্ক আউট’ শুরু হতে তখনও অনেক দিন, তাই প্রথম দিকে কার্তিক ঠিক করে ‘পুশ-আপ’ও করতে পারতেন না।’’ কার্তিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল শরীরের নীচের দিকে পেশি তৈরি করা। অনেক সময় লেগেছে। এমনও দিন গিয়েছে, যখন কার্তিক জিজ্ঞাসা করতেন, ‘আমি পারব তো’? কিন্তু কখনও হাল ছাড়েননি। ত্রিদেব বলেন, ‘‘সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যখন শুটিং চলত, তখন রাতে আমরা ‘ওয়ার্ক আউট’ করতাম, আর সারা রাত শুটিং চললে সকালে বিশ্রাম করে, দুপুরে আমাদের প্রশিক্ষণ শুরু হত। কিন্তু এক দিনও আমরা বিরতি নিইনি। এমনও দিন গিয়েছে, যখন কার্তিক নির্ধারিত ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেননি, কিন্তু ‘ওয়ার্ক আউট’ করা কোনও দিন ছাড়েনন

How did Kartik Aryan get into shape for new film Chandu Champion, fitness trainer shares his experience

ট্রেনার ত্রিদেব পাণ্ডের সঙ্গে অভিনেতা কার্তিক আরিয়ান। ছবি: সংগৃহীত।

এমন চেহারা বানানোর সময়ে কী খেতেন কার্তিক?

প্রশিক্ষণের শুরুতে কার্তিক ২২০০ ক্যালোরির খাবার খেতেন। ১৫ দিন অন্তর কার্তিকের আহার থেকে ১০০ ক্যালোরি করে কম করা হত। পুরো এক বছরে কার্তিকের আহার তালিকায় প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রাইটের মাত্রা কমবেশি করা হত। তার শেষ চার মাস কার্তিক কেবল প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতেন। সঙ্গে প্রোটিন পানীয়। এক বছর মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে কার্তিক দূরে ছিলেন। এমনকি নিজের জন্মদিনে কেক কেটেও সেটা খাননি। ত্রিদেব জানান, ছবিতে কৌপিনা বা ল্যাঙ্গোট পরে কার্তিক যে দৃশ্যে শুটিং করেছেন, তার জন্য ৩-৪ দিন জল খাওয়া কম করে দিয়েছিলেন আর তার সঙ্গে খাবার থেকে নুন সরিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে শরীরের পেশিগুলি স্পষ্ট হয়।

সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি ছিল?

কার্তিক ছবিতে মোট ৫টি পেশাগত বক্সিং ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। একটি নির্দিষ্ট ম্যাচের সময়ে কার্তিকের ডান কাঁধে চোট ছিল। সেই কারণে কার্তিক নিজের হাতের পেশিগুলি ঠিক করে নাড়াচড়া করতে পারছিলেন না। আর শুটিংয়ের সময়ে বক্সিং ম্যাচগুলি দেড় থেকে দুই মিনিটের হতো। সাধারণত আন্তর্জাতিক স্তরের পেশাদার বক্সারের সঙ্গে।

How did Kartik Aryan get into shape for new film Chandu Champion, fitness trainer shares his experience

কার্তিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল শরীরের নীচের দিকে পেশি তৈরি করা। ছবি: সংগৃহীত।

শুটিংয়ের শেষ দিন

শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর তো একেবারেই নয়, বরং খুবই তৃপ্তির ছিল। ত্রিদেব বলেন, ‘‘পরিচালক কবীর খান আগাগোড়া আমার উপরে আস্থা রেখেছিলেন। মাঝেমাঝে কার্তিক কতটা এগিয়েছেন, খবর নিতেন। শেষের দিনটিতে আমিও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল কাল থেকে আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করব। তাই পুরো ছবির ইউনিট যখন কার্তিককে ঘিরে আনন্দ করছিল, আমি দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। কার্তিক আমাকে ইশারা করে ডাকলেও আমি যেতে পারিনি। শুটিং শেষ হলেও কার্তিক এখনও আমার ফিটনেস স্টুডিয়োতে আসেন, কারণ এখন একটা সুস্থ জীবনধারার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ওর।’’ সঠিক মাত্রায় খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম আর স্টেরয়েড থেকে দূরে থাকার অভ্যাসের ফলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement