নিজেদের সাজগোজ, স্টাইল স্টেটমেন্ট, ফ্যাশন সচেতনতা দিয়েও নজর কেড়েছেন এ বছরের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের ফুটবলাররা। ফাইল চিত্র।
চলছে ফুটবল বিশ্বকাপের মহারণ। বিভিন্ন দেশ থেকে কাতারে কাতারে সেখানে ভিড় করেছেন নানা দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। কেউ ব্রাজিলের সমর্থক, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ বা স্পেন। লিয়োনেল মেসিকে এক বার দূর থেকে দেখবেন বলেও পৌঁছে গিয়েছেন অনেকে। খেলা তো রয়েছেই, নিজেদের সাজগোজ, স্টাইল স্টেটমেন্ট, ফ্যাশন সচেতনতা দিয়েও নজর কেড়েছেন এ বছরের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের ফুটবলাররা। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর সবচেয়ে শৌখিন এবং ফ্যাশন সচেতন ফুটবলার কারা? রইল সেই তালিকা।
হ্যারি কেন
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পায়ে চোট পেয়েছিলেন। ফলে তাঁর বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। পরবর্তী সময়ে চিত্রটি অবশ্য বদলে যায়। হ্যারি কেনের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড সেনেগালকে হারিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ আটে উঠল। খেলার মাঠে হ্যারি কেনের বিধ্বংসী রূপ দেখেছেন ভক্তরা। কিন্তু মাঠের বাইরে তিনি একেবারে ‘চকোলেট বয়’। ফ্যাশনদুরস্তও বটে। ইংল্যান্ডের জার্সি পরে যেমন দেখতে লাগে, মাঠের বাইরে ঠিক আলাদা। পেশিবহুল চেহারা। চুলের কায়দা বদলে যায় পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে। ফুটবলার হিসাবে তো বটেই, হ্যারি কেনের স্টাইল স্টেটমেন্টের ভক্তসংখ্যাও কম নয়।
জ্যাক গ্রিলিশ
ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার। দলের হয়ে গোলও করেছেন বিশ্বকাপে। তাঁকে দলে না নেওয়া নিয়ে অনেক দিন সমালোচনা শুনতে হয়েছে কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকে। গ্রিলিশ মাঠে নামলে গ্যালারি থেকে আসা চিৎকারে কান পাতা দায়। খেলেনও ভাল। তার উপর কমবয়সি, কেতাদুরস্ত খেলোয়াড়। মহিলা অনুরাগীর সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। অনেকেই বলে, তাঁকে নাকি অনেকটা ডেভিড বেকহ্যামের মতো দেখতে। পুরোটা সত্যি না হলেও চুলের কায়দা খানিকটা একই রকম। বিভিন্ন সময়ে তাঁর চুলের রং বদলে যায়। কখনও বাদামি, তো কখনও নীল। পেশিবহুল চেহারায় হাঁটুঝুল জ্যাকেটে তাঁকে বেশ মানায়।
অ্যালিসন বেকার
ব্রাজিলের প্রধান গোলকিপার। লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেন। গোলরক্ষা করা তাঁর কাজ হলেও, লিভারপুলের হয়ে গত বছর প্রিমিয়ার লিগে গোলও করেন তিনি। সেই গোল এখনও তাঁর অনুরাগীদের মনে থেকে গিয়েছে। গোলরক্ষক হিসাবে অ্যালিসনের জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্বে। চাপ দাড়ি, টোল পড়া ফর্সা গোলে লালচে আভা, লালচে চুল, গোলাপি ঠোঁট— বেকারের রূপেও মুগ্ধ অনেকেই। কিছু দিন আগেও অবশ্য মাথার চুল কাঁধ ছুঁয়েছিল। এখন অবশ্য চুলের সে কায়দা অতীত। কটা চোখের এই গোলকিপার মহিলা তো বটেই, পুরুষ অনুরাগীদেরও মন কেড়েছেন।
ভার্জিল ফান ডাইক
নেদারল্যান্ডসের অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। সুদর্শনও বটে। মাঠে বল পায়ে বাজিমাত করার পাশাপাশি কেতাদুরস্ত পোশাকেও সমান নজর কাড়েন ভক্তদের। ভার্জিলের ইনস্টাগ্রামে তাঁর ছবি দেখলে বোঝা যাবে তিনি আসলে ঠিক কতটা শৌখিন। জার্সি ছাড়া তাঁকে চেনা দায়। বেশ লম্বা। ফলে যে কোনও ধরনের পোশাক তাঁকে মানিয়ে যায়। মাঠে নামলে গ্যালারি থেকে মহিলা অনুরাগীদের চিৎকারে নাকি কান পাতা যায় না।
নেমার
যতটা যত্ন নিয়ে খেলেন, ঠিক ততটা পরিপাটি করে সাজতেও ভালবাসেন ব্রাজিলের এই তারকা খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই নিজের সাজগোজ সেরে ফেলেছিলেন ফ্যাশন সচেতন এই খেলোয়াড়। প্রতিটি ম্যাচেই তাঁকে একেবারে নতুন রূপে দেখা যাচ্ছে। কখনও চুলের সাজ বদলে ফেলছেন, কখনও চুলের রং। তাঁর দু’পা জুড়ে উল্কির নকশা। হাতেও রয়েছে ট্যাটু। উল্কি আঁকা পায়ে যখন বল নিয়ে মাঠ জুড়ে ছুটে বেড়ান, গ্যালারিতে এবং টিভির সামনে বসে থাকা মহিলা ভক্তদের অনুভূতি ধারণা করতে পারা যায়।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
এ বছরের বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়লেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসাবে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার নজির গড়েছেন। পর্তুগাল অধিনায়ক খেলার মাঠে তো নজির গড়ে থাকেন হামেশাই। কিন্তু খেলার বাইরে ফ্যাশন দুনিয়াতেও রোনাল্ডো বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। খেলা ছাড়াও তাঁর সাজগোজে মুগ্ধ অগণিত ভক্ত। এর আগে বিভিন্ন পোশাক নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছেন তিনি। মাঠের বাইরে রোনাল্ডোর সাজ হার মানাবে বহু বলিউড তারকাকেও।
লিয়োনেল মেসি
বিশ্বকাপে জেতার প্রত্যাশা নিয়ে খেলার মাঠে লড়ে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলাই লক্ষ্য। সেই স্বপ্নপূরণ করার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, সেই লিয়োনেল মেসিও এ বার মরিয়া। সম্ভবত তাঁর ফুটবল জীবনের শেষ বিশ্বকাপ এটি। ফলে জান লড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আট থেকে আশি— মোটামুটি প্রায় সব বয়সের মানুষই মেসির ভক্তের তালিকায় রয়েছেন। তিনি গোল করলে একটি উৎসবের আবহ তৈরি হয়। ৩৫ বছর বয়সেও পায়ে বল নিয়ে ‘ম্যাজিক’ সৃষ্টি করেন তিনি। নিজের সাজগোজ নিয়ে বরাবরই বেশ সচেতন। খুব অদ্ভুত সাজপোশাকে তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। মেদহীন, সুঠাম, পেশিবহুল, নিষ্পাপ চেহারাতেই ঝড় তুলেছেন সব সময়ে। তবে চুলের ছাঁট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই থাকেন। আসলে মেসি যে ভাবেই নিজেকে সাজান, তাঁর ভক্তদের কাছে তিনিই সব সময়ে সবার চেয়ে সেরা।