Cosmetic Dental Treatment

সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় কী ভাবে জুড়ে যাচ্ছে দাঁত? কী কী পরিবর্তন আনা যায় দাঁতের গঠনে?

দাঁতের সজ্জায় খানিক অদল-বদল করলেই সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করা সম্ভব হয় এখন। দাঁতের গঠনে ঠিক কী কী বদলে আনতে চাইছেন অনেকে? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল দন্ত চিকিৎসকের সঙ্গে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৯
Symbolic Image of Cosmetic Dental Treatment.

দাঁতের সজ্জায় খানিক অদল-বদল করলেই সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করা সম্ভব হয় এখন। প্রতীকী ছবি।

প্রাচীন কাব্য থেকে আধুনিক গল্প, উপন্যাস, নারীর সৌন্দর্য বর্ণনায় বরাবরই এসেছে দাঁতের কথা। হাজার বছর আগে হোক কিংবা সাম্প্রতিক কাল, নারী এবং পুরুষ নির্বিশেষে মুক্তোর মতো সাদা, সুন্দর গঠনের সাজানো গোছানো দাঁতের চাহিদা ছিল এবং আছে।

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যে শুধু ত্বক, চুল আর প্রসাধনের ব্যবহারে সীমাবদ্ধ নেই, তা নিয়ে অনেকেই বেশ ওয়াকিবহাল। ইদানীং এই সচেতনতা যেন আরও বেড়েছে। ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে অন্যের মন জয় করতে কম চেষ্টা করেন না অনেকেই। নিয়ম রক্ষার্থে দিনে দু’বার দাঁত মাজলে সেই আশা পূরণ হবে, তা হলফ করে বলা যায় না। ত্বকে জেল্লা আনতে যেমন ভরসা রাখতে হয় নানা বাড়তি কারিকুরিতে, দাঁতের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এক। সৌন্দর্যবর্ধনের আরও একটি পথ হল, জন্মগত দাঁতের গঠনে কিছুটা পরিবর্তন আনা। দাঁতের সজ্জায় খানিক অদল-বদল করলেই সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করা সম্ভব হয় এখন।

Advertisement

দাঁতে ব্যথা, মাড়ি থেকে অনবরত রক্তপাত, নড়বড়ে দাঁতের সমস্যা নিয়ে রোগীরা ভিড় জমাতেন চিকিৎসকের কাছে। ইদানীং সেই ভিড় বেড়েছে। তবে সমস্যায় পরিবর্তন এসেছে। দাঁতের সাজ নিয়ে বেশ উৎসাহী অনেকেই। এই তালিকায় রয়েছেন তারকারাও। দাঁতের গঠনে ঠিক কী কী বদলে আনতে চাইছেন অনেকে? সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় কী ভাবে জুড়ে যাচ্ছে দাঁত? দাঁতে কৃত্রিম ভাবে আদৌ ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল দন্ত চিকিৎসক মৌমিতার সঙ্গে।

Symbolic Picture.

সুন্দর গঠনের সাজানো গোছানো দাঁতের চাহিদা ছিল এবং আছে। প্রতীকী ছবি।

মৌমিতা বলেন, ‘‘দাঁত মূলত দু’ধরনের হয়। এক, ‘প্রাইমারি ডেন্টিশিয়ান’ যাকে আমরা বাংলায় দুধে দাঁত বলি। দুই, ‘পার্মানেন্ট ডেন্টিশিয়ান’ অর্থাৎ, যে সময় থেকে মুখে বত্রিশটি দাঁত গজায়। এ বার এই সময় থেকে দাঁত সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এই সমস্যার রকমফের আছে। কারও ক্ষেত্রে দু’টো দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়। আবার, একটা দাঁতের গা ঘেঁষে অন্য দাঁতের জন্ম, চিকিৎসা পরিভাষায় যে সমস্যাকে ‘ক্রাউডিং’ বলা হয়। যার ফলে ব্রাশ করার সময়ে সমস্যা হয়। দাঁতে খাবার জমে গিয়ে ক্যালকুলাস জন্মায়। এ ছাড়া উঁচু-নিচু দাঁতের সমস্যায় রয়েছে কারও কারও। আবার কারও ক্ষেত্রে উপরের পাটির তুলনায় নীচের পাটির দাঁত আগে বেরিয়ে থাকে। এই ধরনের সমস্যাগুলির সমাধান করতেই মূলত আমরা ‘অর্থোডেন্টিক ট্রিটমেন্ট’ করে থাকি। এর ফলে দেখতে সুন্দর লাগে। হাসলে ভাল লাগে। দাঁতের গঠন ভাল লাগে।’’

এই ধরনের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিগুলি ঠিক কেমন?

মৌমিতার কথায়, ‘‘প্রথমেই বলি দাঁতের ফাঁক বন্ধ করা এবং এবড়ো-খেবড়ো দাঁত সঠিক গঠনে ফেরানোর উপায়ের কথা। এর জন্য একমাত্র চিকিৎসা হল ‘ব্রেসেস’। ব্রেসেস মূলত স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। দু’ধরনের ব্রেস আছে। ১) লিঙ্গুয়াল ব্রেস ২) বাটকাল ব্রেস। এই ব্রেসটি মূলত পুরনো পদ্ধতি। দাঁতে লাগালে ব্রেসটি দেখা যায়। সেটা অনেক সময়ে দেখতে খারাপ লাগে বলে লিঙ্গুয়াল ব্রেস ব্যবহার করা হয়। যেটা দাঁতের ভিতর দিয়ে ব্রেসটা লাগানো থাকছে। যেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই ব্রেসেস হল ক্লিপের মতো একটি জিনিস। যেটি প্রত্যেকটি দাঁতের উপর চাপ তৈরি করে। এই চাপ দিয়ে দাঁতের স্বাভাবিক গঠনে ফেরানো হয়। এটা করতে খরচ পড়ে পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড় লাখ অব্দি এর খরচ। তবে সমস্যার জটিলতার উপর এর খরচ নির্ভর করে। ব্রেস ছাড়াও দাঁতের ফাঁক ভরাট করতে ‘লাইট কিয়োর’ পদ্ধতিও অবলম্বন করা হয়। তবে মুখের আকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।’’

ব্রেসেস ছাড়াও দাঁতের সৌন্দর্য ফেরাতে আর কী করা যেতে পারে? চিকিৎসক বলেন, ‘‘ব্রেসেস ছাড়াও দাঁতে ‘ভিনিয়ারিং’ করানো হয়। অনেকের দাঁত ক্ষয়ে ছোট হয়ে যায়। তখন দাঁতের উপর দিয়ে সেরামিকের পুরু স্তর দেওয়া হয়। অনেকেটা নেলপালিশ পরার পর তার উপর দিয়ে জেল ব্যবহার করা। ঠিক তেমনই। তবে এটা একটু খরচসাপেক্ষ। এক একটি দাঁতে প্রায় দশ হাজার টাকা করে পরে। ভিনিয়ারিং ছাড়াও সুন্দর করতে অনেকেই ‘হোয়াইটেনিং’ করতে চান। যাকে আমরা ‘ব্লিচিং’ও বলে থাকি।

কী ভাবে করা হয় এই ‘টিথ ব্লিচিং’? চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মূলত লেজার দিয়ে এই ব্লিচিং করানো হয়। এর ফলে দাঁত ঝকঝকে হয়। দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। এর খরচ মোটামুটি সাত থেকে কুড়ি হাজারের মতো পড়ে। এ ছাড়া আরও একটি ট্রিটমেন্ট হয় দাঁতের। সেটি হল ‘ব্রিজ’। পাটিতে কোনও দাঁত না থাকলে কিংবা কোনও দাঁত আধভাঙা অবস্থায় থাকলে মূলত ব্রিজ করানো হয়। সে ক্ষেত্রে যদি ভেঙে গিয়ে থাকে, তা হলে ‘রুট ক্যানাল’ করে দাঁতটি রক্ষা করা হয়। তার পরে ওর উপর দিয়ে একটি ক্যাপ লাগিয়ে দেয়। সেটিকে ‘ক্রাউন’ বলা হয়। তবে এটি একটি দাঁতের ক্ষেত্রে। তবে যদি অনেক গুলি দাঁতের উপর এই ট্রিটমেন্ট করা হয়, সেটি তখন ব্রিজ বলা হয়। যদি কোনও দাঁত না থাকে, তা হলে তার পাশের দু’টো দাঁত যদি শক্ত হয়, তা হলে তাদের সাহায্যে মাঝের দাঁতটি বসানো হয়। এটা মুখের সঙ্গে আটকে থাকে। এটা করলে বাইরে থেকে বোঝাই যাবে না, যে কোনও কৃত্রিম দাঁত বসানো হয়েছে। কারণ দাঁতের মাপ এবং গঠনের অন্য দাঁতগুলির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement