Anuttama Bandyopadhyay

‘প্রেম নিয়ে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী’, সমপ্রেম নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় সুজয়প্রসাদ, সঙ্গে অনুত্তমা

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের বিষয় ছিল ‘সমপ্রেম’। অনুষ্ঠানের বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা। অতিথি সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:২২
image of Anuttama Bandyopadhyay and sujoy prasad chatterjee.

অনুত্তমার সঙ্গে ‘সমপ্রেম’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

চলছে লোকে কী বলবে অনুষ্ঠানটির বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন। এক বছর ধরে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দাবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা সহজে কাউকে বলা যায় না! এমন অনেক কথা যা সমাজের চোখরাঙানির ভয়, লোকে কী বলবে তার ভয়— আমরা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করে উঠতে পারি না। তেমনই সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার এক বছর উদ্‌যাপন! এই একটা বছর ধরে মনের নানা লুকোনো প্রশ্নের জবাব খুঁজলেন অনুত্তমা, তবে পথ এখনও বাকি।

এক বছর ধরে যে যে বিষয়গুলি নিয়ে মানুষ আরও জানতে আগ্রহী, যে যে বিষয়গুলি মানুষকে বেশি ভাবায়— সেই সব বিষয়গুলি আবারও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের সোমবারের পর্বে। তারই মধ্যে একটি বিষয় ছিল ‘সমপ্রেম’! অনুত্তমার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সমপ্রেম নিয়ে ছুতমার্গ রয়েছে এখনও সমাজের নানা স্তরে। তা নিয়েই আলোচনায় বসলেন দুই বন্ধু! অভিনেতার জীবনের গল্পটা ঠিক কেমন ছিল? এখন সুজয়প্রসাদ সমাজে নিজেকে যে ভাবে মেলে ধরতে পারছেন, আগে কি তেমন সুযোগ ছিল? খ্যাতি পাওয়ার পর কি পথটা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে? প্রশ্ন করলেন অনুত্তমা। সুজয়প্রসাদ বললেন, ‘‘সেই সময়ে আমি যে এক পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হই, সে কথা কাকে বলব, বুঝতে পারতাম না! এক জন পুরুষ চার বছর ধরে আমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর এক দিন হঠাৎ আমাকে ছেড়ে চলে যায়। শুধু একটা ইমেল মারফত সম্পর্কে ইতি টানে সে। প্রথমে খানিকটা ভেঙে পড়ি বটে। তবে পরে নিজেকে সামলে নিই। সেই সময়ে বিষাদের থেকেও আমার মনের ভিতর কাজ করতে শুরু করে সৃজনশীলতা। আমি তখন আত্মহত্যা করিনি, সেই অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করে লিখে ফেলি ‘রাজকুমারী’ নামে এক কবিতা! আজও কোনও অনুষ্ঠানে আমি গেলে আগে থেকেই আমাকে বলে রাখা হয়, সেই কবিতাটি পাঠ করে শোনাতে।’’

অভিনেতার পূর্বজীবনের নানা কাহিনি উঠে এল আলোচনায়। মনোবিদ জানতে চাইলেন, ‘‘পরিচিতি পাওয়ার আগে তোর লিঙ্গ পরিচয়, যৌনসত্তার যে যাপন তা নিয়ে কি অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল?’’ জবাবে সুজয়প্রসাদ বললেন, ‘‘স্কুলে তো আমি আমার পরিচয় কী, তা-ই বুঝতে পারতাম না। তখন আমার পরিচয় ছিল এক জন নারীসুলভ মোটা পুরুষ। এটাই যেন ছিল আমার অস্তিত্বের নির্ণায়ক। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আমার সঙ্গে একই রকম আচরণ করতেন। আমার সঙ্গে সেই সময় থেকেই জুড়ে গিয়েছিল মেয়েলি তকমা। পরবর্তী সময়ে একটি ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে, যেই ঘটনার পর আমি আত্মহত্যার কথাও ভাবতে শুরু করি। এক জন পুরুষ আমাকে চুমু খেতে এসে হঠাৎ অনুভব করেন আমিও এক জন পুরুষ। তখন আমায় শারীরিক ভাবে চায়নি, ও আমার শরীরকে প্রত্যাখ্যান করে। সে দিনের পর আমি আর আমার শরীরের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। সেই চরম প্রত্যাখ্যানের মূহূর্তে আমি আত্মহত্যার কথাও ভাবি। আমার মা-বাবাকে অনেকেই বলেছেন আপনার ছেলে তো একটু মেয়েলি। দেখুন না তাকে ছেলে করতে পারেন কি না। আমার পথটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। আমি কখনও আত্মবিশ্বাস হারাইনি। গান হোক, কবিতা হোক, কথা হোক, প্রেম হোক কিংবা চুমু— সবটা নিয়ে আমি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।’’

আরও পড়ুন
Advertisement