মেদ লুকোনোর সহজ উপায়। — প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোমর, পেটের মেদ ঝরাতে পারছেন না। অথচ পশ্চিমি পোশাক পরার শখ। এক বার ভাবছেন স্থূল চেহারাতেই গায়ের সঙ্গে আঁটসাট ‘বডিকন’ পোশাক পরে সকলকে তাক লাগিয়ে দেবেন। আবার, পর ক্ষণেই মাথায় আসছে অন্য কথা। ভাবছেন, এই চেহারায় অত আঁটসাট পোশাক পরে হয়তো কারও সামনে বেরোতেই পারবেন না। ঠিক সেই সময়েই মনে পড়ল শেপওয়্যারের কথা।
অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই শেপওয়্যারের ছবি দেখছেন। শেপওয়্যার পরে তার উপর পোশাক পরলে পেট, কোমর বা ঊরুর বাড়তি মেদ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। বিশেষ করে পশ্চিমি পোশাক পরার অভ্যাস থাকলে এই ধরনের একটি শেপওয়্যার থাকা বাঞ্ছনীয়। শরীরচর্চা করে মেদ ঝরানো যাঁদের পক্ষে বেশ কষ্টকর, তাঁদের কাছে এই শেপওয়্যার যেন ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ থেকে বেরিয়ে আসা ‘জিন’। তবে, এই জিনের কাছে যা খুশি আবদার করা যায় না। শরীরে যে কোনও জায়গার বাড়তি মেদ লুকোতে এই জিন অর্থাৎ শেপওয়্যারের জুড়ি মেলা ভার। এই শেপওয়্যার খোলার বা পরার সমস্যা থাকলেও ঘাম না ঝরিয়ে নিজেকে রোগা দেখানোর লোভ সামলানো বেশ কঠিন। তরুণ-তরুণী থেকে প্রৌঢ়, বয়স্ক— সকলের কাছেই শেপওয়্যার এখন বেশ জনপ্রিয়।
সাত-পাঁচ না ভেবে অনলাইনে ভাল সংস্থার একটি শেপওয়্যার কিনবেন বলে মনস্থ করলেন। দামও খুব বেশি নয়। অনলাইনে ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন রকম শেপওয়্যার পাওয়া যায়। নামি বিদেশি সংস্থার শেপওয়্যার কিনতে গেলে পকেটে রেস্ত থাকা চাই। তবে, সেই পোশাকেরও তো বিভিন্ন ধরন আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শেপওয়্যারের ধরন এবং দাম— দুই-ই বদলে যায়। অনলাইনে কেনার আগে সেগুলি সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।
অনলাইনে শেপওয়্যার কেনার আগে কী কী মাথায় রাখবেন?
১) পোশাকের ধরন বুঝে শেপওয়্যার বাছতে হয়। তাই কেনার আগে ঠিক করে নিন কোন পোশাকের জন্য শেপওয়্যার কিনবেন।
২) কী কারণে শেপওয়্যার পরবেন সেটি মাথায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধুই মেদ লুকোনো না কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে, তা ভাল করে বুঝে নিন।
৩) দোকানে গেলে সেখানকার পেশাদার কর্মীরা শেপওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করতেই পারেন। কিন্তু অনলাইনে কিনতে গেলে এই পোশাকের সাইজ় এবং ফ্যাব্রিক সম্বন্ধে ধারণা থাকা জরুরি।
কত ধরনের শেপওয়্যার কিনতে পাওয়া যায়?
১) অ্যাথলেটিক শেপওয়্যার:
নিয়মিত খেলাধুলো কিংবা শরীরচর্চা করেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এই অ্যাথলেটিক শেপওয়্যার বেশ কাজের। শরীরচর্চা করার পোশাক বা ‘অ্যাক্টিভওয়্যার’-এর ভিতর ইদানীং অনেকেই শেপওয়্যার পরেন। শারীরিক কসরত করার সময়ে শরীরের পেশিগুলি চাপের মধ্যে থাকলে চট করে আঘাত লাগা বা টান ধরার মতো সমস্যা হয় না। তবে, এই ধরনের পোশাক যে হেতু অত্যধিক আঁটসাট হয়, তাই খেলার সময়ে রক্ত চলাচলে সমস্যা হতে পারে। তাই সেই বিষয়ে একটু সাবধান থাকাই ভাল।
২) দ্য করসেট শেপওয়্যার:
এ দেশে না হলেও বিদেশে এই ধরনের শেপওয়্যার পরার চল রয়েছে। বিদেশে অভিজাত বংশের মহিলারা ফ্লেয়ার্ড গাউনের ভিতর এই করসেট শেপওয়্যার পরতেন। ভিক্টোরিয়ান যুগ কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও মহিলাদের শেপওয়্যার পরতে দেখা গিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পিঠ, স্তন সংলগ্ন অঞ্চল সুঠাম দেখানোর জন্য এই পোশাক পরা যায়। অন্যান্য শেপওয়্যারের তুলনায় করসেট একটু আলাদা। কারণ, এই শেপওয়্যারটি নিজের গায়ের মাপ, সুবিধা অনুযায়ী ছোট-বড় করা যায়।
৩) দ্য হিপ শেপওয়্যার:
স্থূলদের না হয় রোগা দেখানোর ব্যবস্থা করা গেল। কিন্তু যাঁরা একেবারে ফিনফিনে রোগা, তাঁদের কী হবে? শাড়ি, ড্রেস বা বডিকন— যে কোনও পোশাকেই তাঁদের নিজেকে ‘কাকতাড়ুয়া’র লাগে। তেমন চেহারায় কথা মাথায় রেখেই সম্প্রতি বাজারে এসেছে কুশন্ড হিপ শেপওয়্যার। এই ধরনের শেপওয়্যার পরলে শরীরী ভাঁজগুলি আরও স্পষ্ট হয়। যাঁরা রোগা বলে দুঃখ করেন, তাঁদের জন্য এটি একেবারে উপযুক্ত।
৪) দ্য পোস্টপার্টাম শেপওয়্যার:
সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর মায়েদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন আসে। তা একেবারেই স্বাভাবিক। দশ মাস ধরে সন্তানধারণ এবং প্রসবের পর পেটের কাছে অতিরিক্ত যে মেদ বা টিস্যু জমে, তা ঢাকতে নতুন মায়েদের পোস্টপার্টাম শেপওয়্যার পরার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ঝুলে পড়া মেদ যেমন জব্দ হবে, তেমনই অস্ত্রোপচারের ধকলেও প্রলেপ পড়বে।
৫) বডিস্যুট:
সালোয়ার কামিজ়, লম্বাঝুলের ম্যাক্সি ড্রেস পরুন বা সাধারণ টপ— এই বডিস্যুট শেপওয়্যার কিন্তু দিব্যি মানিয়ে যায়। ঝুলে পড়া স্তনের, পাকস্থলী, পেট, পিঠ, কোমর এবং নিতম্বের বাড়তি মেদ ঢেকে রাখতে এই ধরনের শেপওয়্যার পরাই যায়। তবে বার বার প্রস্রাবের বেগ এলে কিন্তু মুশকিল। এই ধরনের পোশাক পরতে যেমন কষ্ট হয়, চট করে খুলতে গেলেও সমস্যা হতে পারে।