Rahul Gandhi

‘মোদী’ মামলায় রাহুলের বিরুদ্ধে রায় স্থগিত সুপ্রিম কোর্টে, অনাস্থা বিতর্কের আগে কি সংসদে ফিরবেন?

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী ঐক্যের জোট ‘ইন্ডিয়া’। এর মধ্যেই শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে স্বস্তি পেয়েছেন রাহুল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ২২:৫৯
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরত পাওয়ার রাস্তা সুগম হল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। সেই ‘জয়’-এর উদ্‌যাপনের রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার উঠে এল আরও একটি প্রশ্ন। রাহুলের সাংসদ পদ কবে ফেরত পাবেন তিনি? তা কি চলতি বাদল অধিবেশনের মধ্যেই সম্ভব? সে ক্ষেত্রে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যখন সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে তাঁর দল এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি, তখন কি সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সাংসদ হিসাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন রাহুল গান্ধী? নাকি মণিপুর নিয়ে যখন কেন্দ্রের শাসকদলকে সাঁড়াশি আক্রমণ করবেন বিরোধীরা, তখন সংসদের বাইরে থেকেই তার খবর নেবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল?

Advertisement

মোদী পদবি অবমাননা মামলায় সুরাত আদালতে দোষী সাব্যস্ত রাহুলকে দেওয়া দু’বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশে শুক্রবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনাচক্রে এই সিদ্ধান্তের পরে আর কেবল চার দিন চলবে সংসদের অধিবেশন। ১০ অগস্ট, বৃহস্পতিবার বাদল অধিবেশনের শেষ দিন। তার আগে ৮ অগস্ট, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী ঐক্যের জোট ‘ইন্ডিয়া’। এর মধ্যেই শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে স্বস্তি পেয়েছেন রাহুল। স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে রাহুলও সংসদে উপস্থিত হয়ে মোদীর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেবেন কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

শুক্রবারের সুপ্রিম স্থগিতাদেশের পরে কংগ্রেসের তরফে রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর দাবি তোলা হয়েছে স্পিকারের কাছে। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আমরা আশা করব স্পিকার যেমন দ্রুততার সঙ্গে রাহুলজির পদ খারিজ করেছিলেন, তেমনই সক্রিয়তা দেখা যাবে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।” লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘রাহুলজিকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে।’’ তবে শেষ পর্যন্ত রাহুল তাঁর সাংসদ পদ ফিরে পাবেন কি না, আর পেলেও এই বাদল অধিবেশন চলাকালীন তাঁকে সংসদে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত আপাতত থাকছে লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লার হাতেই।

রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনার সময়ে সংসদে রাহুলের উপস্থিতি ‘ইন্ডিয়া’কে বাড়তি জোর দেবে। বিশেষত বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে যে দীর্ঘদিন ধরে যে আইন-আদালত এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের যে অভিযোগ আনছে, তা আরও জোরাল হবে, রাহুল সংসদে ফিরলে। কারণ মোদী পদবি অবমাননা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে রাহুল বলেছিলেন, তাঁর মামলাটিতে দেশের বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ‘অবিচার’কে হারিয়ে সংসদে রাহুলের প্রত্যাবর্তনে প্রথম দানেই ১-০ ‘গোলে’ শাসকদলের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকবে বিরোধীরা।

রাজনীতির নজরদারেরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবারের বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবটি অনেকাংশেই প্রতীকী। কারণ এই প্রস্তাবে পাটিগণিতের হিসাবেই বিরোধীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ৫৪৩ সাংসদের লোকসভায় সরকারের পতন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন ২৭২ সাংসদের সমর্থন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সাংসদ সংখ্যা ৩৩২। তাই এই অনাস্থা প্রস্তাব আসলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী বিপ্লব। যা সংসদে মোদীকে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করবে। বিরোধীদের সুযোগ দেবে এ ব্যাপারে শাসকদলকে ‘চেপে ধরার’। তাই রাহুলের উপস্থিতি সেখানে বিরোধীদের প্রতীকী বিপ্লবে একটি জয়ের সূচক হিসাবেই দেখা হবে। যদিও এই সবকিছুই আপাতত নির্ভর করছে একজনের সিদ্ধান্তের উপর। তিনি লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা। কারণ একমাত্র তাঁর সিদ্ধান্তেই ফিরতে পারে রাহুলের সাংসদ পদ।

শুক্রবার যা হল

রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের জেলের মেয়াদ নিয়ে সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আরএস গাভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চ। দুই বিচারপতির বেঞ্চ সুরাত আদালতের রায়ের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘কেন রাহুল গান্ধীকে অপরাধমূলক মানহানির মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি, দু’বছরের জেলের সাজা দেওয়া হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখাতে পারেনি।’’

রাহুলের আবেদন

‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাহুলের দু’বছর জেলের যে সাজা গত ২৩ মার্চ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দিয়েছিল, তার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুলের আবেদন গত ৭ জুলাই খারিজ করে দিয়েছিল গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চ। গুজরাত হাই কোর্টের আগে সুরাতের দায়রা আদালতও সাজার রায় বহাল রেখেছিল। কিন্তু শুক্রবারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর কংগ্রেসের মুখে হাসি ফুটল। স্বস্তি পেলেন রাহুলও।

কেন এই রায় গুরুত্বপূর্ণ

ওই মেয়াদের সাজা দেওয়ার ফলে শুধু সাংসদ পদ হারানো নয়, ছ’বছরের জন্য রাহুলের ভোটে লড়াও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুরাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সেই রায় বহাল রেখেছিল সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টও। কিন্তু শুক্রবারের সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ২০২৪ সালে রাহুলের ভোটে লড়ার পথেও বাধা দূর হল।জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও। ফলে রাহুলের উপর ‘সংসদীয় নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছেন তাঁরা।

কেন অভিযুক্ত ছিলেন রাহুল

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জন্য গত ২৩ মার্চ রাহুলকে দু’বছরের করাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪ মার্চ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যায়। আইন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই হিসাবে রাহুলের সাংসদ পদ অবিলম্বে খারিজ হওয়ার ছিল।

স্বাগত জানিয়েছেন মমতা-সহ ‘ইন্ডিয়া’

মোদী পদবি অবমাননা মামলায় রাহুল গান্ধীর সাজার উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকেরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে বলেন, “এটি বিচারবিভাগের জয়।” শুধু তাই-ই নয়, এই জয় যে ‘ইন্ডিয়া’কে আরও জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করার শক্তি জোগাল, সে কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পরে অখিলেশ যাদব, লালুপুত্র তেজস্বী যাদব, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনও সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেন।

কংগ্রেসের উদযাপন

রাহুলের রায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশ জুড়ে উৎসবে মেতে ওঠেন কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেসের দলীয় দফতরে বাজতে শুরু করে ঢোল, নাকাড়া। স্লোগান ওঠে মুহুর্মুহু। জয়ধ্বনি চলে রাহুলের নামে। তেমন পরিস্থিতিতে আকবর রোডের কংগ্রেসের সদর দফতরে হাজির হন রাহুল। সঙ্গে বোন প্রিয়ঙ্কা। মুহূর্তে আনন্দের বাঁধ ভাঙে কর্মী-সমর্থকদের। রাহুল, প্রিয়ঙ্কাকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় জয়ধ্বনি। উড়তে থাকে আবির। ফুলের পাপড়ি।

আরও পড়ুন
Advertisement