মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট। — ফাইল চিত্র।
মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) এবং গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে বৃহস্পতিবার তিনি লিখেছেন, ‘‘মণিপুরের ভয়াবহ ভিডিয়োটি দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। দুই মহিলার উপর উন্মত্ত জনতার নির্মমতা দেখে মনে তৈরি হয়েছে ক্রোধ। প্রান্তিক শ্রেণির নারীদের উপর যে হিংসা হয়েছে, তা দেখার কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বর্বরোচিত এই কাজ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা মানবতার বোধগম্য নয়। দুর্বৃত্তদের এই অমানবিক কাজের প্রতিবাদ ও ভুক্তভোগীদের বিচারের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়াতে হবে।’’
বুধবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মণিপুরের ওই ভিডিয়ো ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। ছবিটি গত ৪ মে তোলা বলে দাবি মণিপুর পুলিশের। থৌবল জেলায় নংপোক সেকমাই থানার অদূরে ওই দুই মহিলার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলের অদূরেই কঙ্গপকপি জেলার সীমানা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ শুক্রবারের মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্র এবং মণিপুর সরকারের কাছে। অন্য দিকে, গত আড়াই মাস ধরে মণিপুরের ধারাবাহিক হিংসা নিয়ে মুখ না খুললেও বৃহস্পতিবার দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Heartbroken and outraged to witness the horrific video from Manipur showing the brutal treatment of two women by a frenzied mob.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 20, 2023
No words can express the pain and anguish of witnessing the violence inflicted on marginalized women. This act of barbarism is beyond comprehension…
বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে সংসদ ভবন চত্বরে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। ওই ঘটনার জন্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় তিনি ব্যথিত এবং ক্রুদ্ধ বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে, মণিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ জানিয়েছেন, দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ৪ মে গোষ্ঠীহিংসার সূচনা পর্বেই দুই মহিলা গণধর্ষণ এবং হিংসার শিকার হলেও ৭৭ দিন পরে কেন পুলিশ সক্রিয় হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এখনও পর্যন্ত মণিপুরে গোষ্ঠীহিংসায় প্রায় দু’শো মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। নির্যাতিতা মহিলাদের এক জন জানিয়েছেন, তাঁকে গণধর্ষণও করে দুষ্কৃতীরা।
বুধবার সমাজমাধ্যমে ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার সময় হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরে গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরেই ছিল মমতার পাঠানো তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন দলে রয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার। রাজ্যসভার বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবও রয়েছেন ওই দলে। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তার পর রিপোর্ট আকারে তা তুলে দেওয়া হবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ঘরছাড়াদের শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি বুধবার রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল সাংসদেরা। কথা বলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডেরেকরা। রাতে তাঁদের কলকাতায় ফেরার কথা।