—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শীতের শুরুতে সর্দি-কাশি হয়েছিল। সর্দি কয়েক দিনে কমে গেলেও কাশি থামেনি। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে কয়েক দিনের জন্য কমলেও আবার ফিরে এসেছে কাশি। তীব্র কাশির জেরে ব্যাঘাত ঘটছে ঘুমের। গলার অবস্থাও বেশ খারাপ। শীত পড়তেই এমন চিত্র কার্যত ঘরে ঘরে। কেন সারছে না কাশি? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে মূলত দায়ী ভুল ওষুধ খাওয়া।
কাশি কমছে না কেন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু তাড়াতাড়ি সারার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বা না নিয়েই অ্যান্টিবায়োটিক খান। অথচ এই সমস্যা সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের জেরে হয়ে থাকে। এই ভাইরাস এক বার দেহে প্রবেশ করলে মাত্র কয়েকটা দিন সময় লাগে সুস্থ হতে। চিকিৎসক সুবীর মণ্ডল বলছেন, “সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসায় অস্বস্তি ও কষ্ট কমাতে প্রথমে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ দিয়ে সর্দি বসিয়ে দেওয়া হয়। কারণ জ্বর ও সংক্রমণ কমতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় দিতেই হয়। ওই সময়টার পরে সংক্রমণের প্রভাব কমে গেলে নতুন উপসর্গ, যেমন বসা সর্দির চিকিৎসা করা দরকার। কিন্তু প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে। নাক থেকে গলার পিছনের অংশ বেয়ে সর্দি নামতে থাকে। তার মধ্যে থাকা ভাইরাসের প্রভাবে ওই জায়গায় ক্ষতের মতো তৈরি হয়। তার জেরেই শুরু হয় কাশি।”
আবার সেই ক্ষত সারার সময়ে ওই জায়গায় টান পড়া বা শুকিয়ে যাওয়ার জন্য কাশি হতে থাকে। খাবার খেলেও ওই জায়গায় নতুন করে অস্বস্তি হয়। পালমোনোলজিস্ট সুস্মিতা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এই সময়ে বেশি করে জল খেতে হবে। ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে গার্গল করলে বা স্টিম নিলে কিছুটা আরাম মিলবে।’’
সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঠান্ডা লাগার পরে প্রথমে তিন দিন দেখতে হবে। ওই সময়ে কেবল অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আর সঙ্গে জ্বর হলে, তার জন্য প্যারাসিটামল। প্রকোপ কমছে না বাড়ছে, তা দেখার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে। সংক্রমণ কমতে থাকলে বুঝতে হবে তা ভাইরাসের জন্য হয়েছে। কিন্তু জ্বর, সর্দি, কাশি প্রভৃতি উপসর্গ যদি বাড়তে থাকে, তা হলে সেটি ব্যাক্টিরিয়ার জন্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিআরপি বা শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা পরীক্ষার পরে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন চিকিৎসক। ভাইরাস না ব্যাক্টিরিয়া, কার থেকে এই সংক্রমণ, তা বোঝার জন্য দরকারে অ্যান্টি-অ্যালার্জি পরীক্ষা বা ইনফেকশন মার্কার টেস্টও করাতে পারেন চিকিৎসক।
বেশি সতর্ক হবেন কারা
সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘ডায়াবিটিস, ক্যানসার বা অন্য রোগের কারণে যাঁদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশিতেও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় জ্বর বেশি না এলেও পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অবহেলা করা চলবে না।’’ প্রবীণদের প্রতি পাঁচ বছরে একবার নিউমোনিয়া এবং প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
যাঁদের সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়) রয়েছে, তাঁদের দেহে বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে অক্সিজেনের আদানপ্রদান কমে যায়। হাঁপানি এটারই একটা রূপ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সংক্রমণের জেরে সর্দি-কাশি হলে এই আদানপ্রদানের হার আরও কমে। সে ক্ষেত্রে ইনহেলার জরুরি। সংক্রমণ হলে প্রয়োজনে ইনহেলারের মাত্রা বাড়ানো বা ওষুধ বদলাতে হতে পারে। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করানোও জরুরি। সিওপিডি-র রোগীদের ক্ষেত্রে দেহে অক্সিজনের মাত্রা এমনিই কম থাকে। কিন্তু তা ৯০-এর নীচে চলে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। আবার শীতে বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকায় অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় সিওপিডি রোগীদের।
কিছু সাবধানতা অবলম্বন
শিশুদের ক্ষেত্রেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া দরকার। সুস্মিতা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘শীতকালে খুব সকালে ও সন্ধ্যায় বয়স্ক এবং শিশুরা বাইরে না বেরোলেই ভাল। তবে বেরোতে হলে সার্জিকাল মাস্ক পরার অভ্যেস করতে হবে।’’ এতে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়ানোর পাশাপাশি শ্বাস নিলে ঠান্ডা বাতাস ঢোকাও আটকানো যাবে। শিশুদের বারবার সর্দি হলেও তেমন ভয়ের কিছু নেই। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে না বলেই এটা হয়। তবে খুব বেশি ভুগলে অ্যালার্জি টেস্ট করাতে হবে। সর্দি থেকে শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। নিজের ইচ্ছে মতো দোকান থেকে কাফ সিরাপ কিনে খাওয়াবেন না। সাধারণ সর্দি-কাশিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ইনহেলার ব্যবহারেও সাবধান করছেন চিকিৎসকেরা। নাকে ব্লক থাকলে নাসাল ড্রপ দিয়ে তার সমাধান করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
সর্দি-কাশি হওয়া দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রকাশ। তাই সামান্য সর্দি-কাশিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। দ্রুত সুস্থ হতে নানা রকম ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বরং বেশি।