অমিত শাহের কাছে গিয়ে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড চাইলেন প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।
তিপ্রা মথার অপেক্ষায় বসে না থেকে ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা প্রায় পাকা করে ফেলেছে বাম-কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে ত্রিপুরার জনজাতি দলটির নেতাদের বৈঠকে সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়নাল অ্যালায়েন্স (তিপ্রা মথা) নেতৃত্বে গ্রেটার (বৃহত্তর) তিপ্রাল্যান্ডের ‘লিখিত প্রতিশ্রুতি’র দাবিতে অনড় তিপ্রা নেতারা। দলের প্রধান তথা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বুবাগ্রা (রাজা) প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মন বলেছেন, ‘‘এখনও আমরা কোনও জোটে নেই। জনজাতি সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড প্রতিষ্ঠাই আমাদের এক মাত্র লক্ষ্য।’’
প্রদ্যোত স্পষ্ট জানিয়েছেন, বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্য ভেঙে পৃথক বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য চান তাঁরা। যা, আয়তনের দিক থেকে হবে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম। ২০১১ সালের জনগণনা রিপোর্ট তুলে ধরে তাঁর দাবি, বাঙালিদের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে ত্রিপুরার আদি বাসিন্দা জনজাতিরা নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়েছেন। প্রসঙ্গত, ওই জনগণনা রিপোর্ট জানাচ্ছে, উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের মোট ৩৬ লক্ষ ৭৪ হাজার নাগরিকের মধ্যে বাঙালি ২৪ লক্ষ ১৪ হাজার। অন্য দিকে, জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার।
ত্রিপুরার ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০টি জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে এর মধ্যে ১০টিতে বিজেপি এবং ৮টিতে তার সহযোদী দল আইপিএফটি জয়ী হয়েছিল। সিপিএম জিতেছিল দু’টিতে। গত কয়েক মাসে আইপিএফটির নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই তিপ্রায় যোগ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জনজাতি এলাকায় বাম-কংগ্রেস জোটকে ঠেকাতে তিপ্রাকে পাশে পেতে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন। দলের জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।
১ জানুয়ারি আইপিএফটির প্রধান তথা জোট সরকারের মন্ত্রী এনসি দেববর্মার মৃত্যুর পর কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া দল ইতিমধ্যেই তিপ্রায় মিশে যাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে তিপ্রার সমঝোতা হলে জনজাতি প্রধান ২০টি আসনে পদ্ম-শিবির সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বিধানসভা ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের পক্ষে প্রদ্যোতের দাবি মেনে বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড গঠনের বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।