মহুয়া মৈত্র এবং নিশিকান্ত দুবে। — ফাইল চিত্র।
শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দনির থেকে উপহার এবং অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র— ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের এই অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে সংসদের এথিক্স কমিটি। কিন্তু নিশিকান্তের বিরুদ্ধে সাত মাস আগে তিনি ডিগ্রি জালের যে অভিযোগ তুলেছিলেন, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না কেন এ বার সে প্রশ্ন তুললেন মহুয়া।
সেই সঙ্গে মহুয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত বছর ঝাড়খণ্ডের দেওঘর বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের ঘরে ঢুকে গুন্ডামি করার অভিযোগে নিশিকান্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার নিশিকান্ত এক্স হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর চিঠি পোস্ট করে মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানিয়েছিলেন। তার জবাবে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন মহুয়া।
সেই পোস্টে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর পাঠানো চিঠি জাল ডিগ্রিধারীর কাছে আছে শুনে খুশি হলাম। এখন অপেক্ষা করছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক কবে বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের ঘরে ফর্জি (জালিয়াত) দুবের অবৈধ অনুপ্রবেশের তদন্ত করবে।’’
প্রসঙ্গত, নিশিকান্তের অভিযোগ ছিল, মহুয়া যখন ভারতে, তখন দুবাই থেকে তাঁর সংসদীয় আইডিতে লগইন করা হয়েছিল হিরানন্দনির তরফে। এতে বিঘ্নিত হয়েছে গোটা দেশের নিরাপত্তা। এ বিষয়ে এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফরমেটিকস সেন্টার)-কে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বৈষ্ণো চিঠিতে নিশিকান্তকে আশ্বাস দেন, এনআইসি এ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দেবে তদন্তকারীদের।
২০০৯ থেকে টানা তিনটি লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে নির্বাচিত নিশিকান্তের বিরুদ্ধে চলতি বছরের গোড়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন মহুয়া। নিশিকান্ত তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত যে নথিগুলি পেশ করেছিলেন, তার প্রতিলিপি এবং এ সংক্রান্ত নথি পোস্ট করে চলতি বছরের ৮ মার্চ তিনটি টুইট করেছিলেন মহুয়া।
প্রথম টুইটে লিখেছিলেন, ‘‘মাননীয় সদস্য ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের হলফনামায় নিজেকে ‘দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের এমবিএ’ বলে উল্লেখ করেছেন। মনে রাখবেন, ২০১৯ সালের আগে শিক্ষাগত যোগ্যতার পুরো বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।’’
দ্বিতীয় টুইটে মহুয়ার মন্তব্য ছিল, ‘‘দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রশ্নের জবাবে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, মাননীয় সদস্যের (নিশিকান্ত) নামের কোনও ব্যক্তি ১৯৯৩ সাল থেকে সেখানে এমবিএ পাঠক্রমে ভর্তি হননি বা ডিগ্রি পাননি। তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নেও একই জবাব মিলেছে।’’
এর পরের টুইটে নিশিকান্তকে নিশানা করে মহুয়া লিখেছিলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের হলফনামায় মাননীয় সদস্য এমবিএর কোনও উল্লেখই করেননি! শুধু জানিয়েছেন, তিনি ২০১৮ সালে রাজস্থানের রানা প্রতাপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। অনুগ্রহ করে মনে রাখুন, বৈধ মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি ছাড়া ইউজিসি স্বীকৃত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা যায় না।’’
শুধু ডিগ্রি জালিয়াতি নয়, গত বছর দেওঘর বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের ঘরে ঢুকে পড়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নিশিকান্তের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, নিশিকান্ত, তাঁর পুত্র এবং সাংসদ মনোজ তিওয়ারি-সহ ন’জন বিজেপি নেতা বিমানবন্দরের ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল’-এ ঢুকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের হুমকি দিয়ে রাতে চার্টার্ড বিমানের উড়ানের অনুমতি দিতে বাধ্য করেছিলেন। বিমানবন্দরের ডিএসপি সুমন আমনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।