বামেদের পথে তিপ্রা-কাঁটা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ত্রিপুরায় একটা সময় পর্যন্ত এমন সমীকরণ ছিল যে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকবে তিপ্রা মথা। কিন্তু রাজার দলের সঙ্গে বোঝাপড়াটা করা যায়নি। আর সেই তিপ্রা মথাই সিপিএমের তথা বাম-কংগ্রেস জোটের সরকার গড়ার ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হয়ে উঠল।
ত্রিপুরায় বিজেপি একাই ৩২টি আসন জিতে দ্বিতীয় বার সরকার বানাতে চলেছে। আগের বারের থেকে ফল অনেকটাই খারাপ হলেও ৬০ আসনের ত্রিপুরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেই বিজয়ের পথ কুসুমাস্তীর্ণ করে দিয়েছে তিপ্রা মথা। কমপক্ষে ১৬টি আসনে তিপ্রা যা ভোট পেয়েছে তা বিজেপির জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তিপ্রা থাকলে তাই ত্রিপুরায় মুখ থুবড়ে পড়তে হত পদ্মকে।
বৃহস্পতিবার ঘোষিত ফলে দেখা গিয়েছে, বাম ও কংগ্রেস মিলিত ভাবে ১৪টি আসন পেয়েছে। আর ‘বুবাগ্রা’ (মহারাজ) প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার দলের ঝুলিতে ১৩টি আসন। নিজেরা যতগুলি আসনে জিতেছে তার চেয়ে বেশি আসনে বিজেপির জয়ে সুবিধা করে দিয়েছে মহারাজের দল তিপ্রা।
কংগ্রেস এবং বামেরা আসন সমঝোতার মধ্যেই কথা বলে তিপ্রার সঙ্গেও। কিন্তু একটি জায়গায় সমস্যা হয়। গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনকে তীব্র করার লক্ষ্যে আইপিএফটি-এর সঙ্গে হাত মেলায় তিপ্রা। বামেদের প্রধান সমস্যা ছিল, তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করা। তবে তিপ্রা বা এমনকি, আইপিএফটি-র সঙ্গে সিপিএম কৌশলগত সমঝোতা করার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তাতে কিছু হয়নি। বরং, বিজেপিকেই সুবিধা করে দিল মহারাজার দল।
তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন না জানালেও কম ব্যবধানে সরকার গড়ার রায় পাওয়া বিজেপি তিপ্রা মথার সঙ্গে এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে মানিক সাহার সরকার আরও একটু নিরাপদ হবে বলেই মনে করছে বিজেপি। তা ছাড়া ত্রিপ্রা মথার প্রতি বিজেপির কৃতজ্ঞতাও কম নয়।
তিপ্রা মথা বিজেপিকে কতটা সাহায্য করেছে তা কয়েকটি আসনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাচ্ছে। প্রথমেই দেখতে হবে ধনপুর কেন্দ্রকে। এই কেন্দ্র থেকে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সিপিএমের মানিক সরকার। সেখানে এ বার সিপিএম প্রার্থী করে কৌশিক চন্দকে। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের কাছে হেরেছেন ৩ হাজার ৪৪০ ভোট। ওই আসনেই তিপ্রা মথা পেয়েছে ৮ হাজার ৪৫৭ ভোট। যেটা জোটে থাকলে প্রতিমার পক্ষে জয় সম্ভব ছিল না।
একই রকম উল্লেখযোগ্য রাজ্যের মন্ত্রী রতনলাল নাথের আসন মোহনপুর। এখানে বিজেপি জিতেছে ৮ হাজার ৮২৭ ভোটে। সেখানে তিপ্রা মথা পেয়েছে ১১ হাজার ৭৮১ ভোট। এমন আরও অনেক আসনই রয়েছে। রাজ্য সিপিএমের বক্তব্য, তিপ্রা মথার সঙ্গে জোট গড়া সম্ভব ছিল না। সেটা হলে সিপিএম একাই ৩০টির কাছাকাছি আসন পেত।