বিরোধী শিবিরের ভোটে ভাল রকম ভাগ বসিয়েছে মহারাজের দল তিপ্রা মথা। ছবি: টুইটার।
ভোটের আগে চর্চা ছিল, রাজা গড়ার কারিগর হবেন ‘মহারাজ’। ফল বেরোনোর পরে দেখা গেল, বিরোধী শিবিরের ভোটে ভাল রকম ভাগ বসিয়েছে মহারাজের দল তিপ্রা মথা। তার ফলে বিজেপির পথ মসৃণ হয়েছে। নতুন সরকারের সুতো আর তাঁর হাতে বাঁধা থাকার প্রশ্ন থাকছে না বটে। তবে ত্রিপুরায় ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকারে ফেরার জন্য ‘বুবাগ্রা’র কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারে বিজেপি!
মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি এ বার একাই পেয়েছে ৩২টি আসন। জনজাতি এলাকায় পাঁচ বছর আগে ভোটে ধুন্ধুমার ফেলে দেওয়া আইপিএফটি এ বার প্রায় ধূলিসাৎ, জিততে পেরেছে একটি মাত্র আসনে। বাম ও কংগ্রেস মিলিত ভাবে পেয়েছে ১৪টি আসন। আর মহারাজ বা ‘বুবাগ্রা’ প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার দলের ঝুলিতে ১৩টি আসন। প্রায় ২১% ভোট। জনজাতি সংরক্ষিত ২০টি আসনের নিরিখে দেখলে তার মধ্যে ১৩টিই মথার। বিজেপির ৬টি এবং বাকি একটি আইপিএফটি-র।
কিন্তু জয়-পরাজয়ের সোজা হিসেবেই মথার উত্থানের কাহিনি সীমাবদ্ধ নয়। ভোটের ফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণেই দেখা যাচ্ছে, কম-বেশি ১৯টি আসনে বিজেপির জয়ের রাস্তা সুগম হয়েছে মথার পাওয়া ভোটের কারণে। ওই সব কেন্দ্রে সিপিএম বা কংগ্রেসের ভোট এবং মথার প্রাপ্ত ভোট বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে বেশি। বিরোধী ভোট দু’দিকে ভেঙে গিয়েছে বলে অল্প ব্যবধানে আসন বার করে নিয়েছে বিজেপি। এবং জনজাতি এলাকার বাইরে সাধারণ আসনেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে বলেই মথাকে আখেরে বিজেপির ‘পরিত্রাতা’ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক শিবির!
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএমের মানিক সরকারের ছেড়ে যাওয়া ধনপুর কেন্দ্রের কথা ধরা যাক। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ওখানে বিজেপি প্রার্থী হয়ে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৭৪ ভোট। সিপিএমের কৌশিক চন্দ দ্বিতীয় হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩৪ পেয়ে। কিন্তু মথার অমিয় দয়াল নোয়াতিয়া ৮ হাজার ৪৫৭ ভোট না পেলে প্রতিমার হাতে শংসাপত্র উঠত না! একই ভাবে মোহনপুরে রাজ্যের মন্ত্রী, বিজেপির রতন লাল নাথ জয়ী হয়েছেন ১৯ হাজার ১২৮ ভোট পেয়ে। কংগ্রেস প্রার্থী প্রশান্ত সেন চৌধুরীর প্রাপ্তি ১০ হাজার ৩০১ ভোট। মথার প্রার্থী তাপস দে ১১ হাজার ৭৮১ ভোট পেয়েছেন। ত্রিপুরার বিচারে বড় ব্যবধানে জেতা রতনের এই জয়ও সংশয়ে পড়ত কংগ্রেস-মথায় ভোট ভাগ না হলে!
বাম ও কংগ্রেস তাঁদের জন্য দরজা খোলা রেখেছিল। সাড়া দিলে খেলা তো ঘুরে যেত? স্বয়ং ‘বুবাগ্রা’ অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের অভিন্ন অবস্থানে আসার মতো জায়গা ছিল না। তাই সমঝোতা হয়নি। বিজেপি জোটের গত বারের চেয়ে ১১টি আসন কমেছে। আর দু’বছর আগে তৈরি হওয়া আমাদের দল ১৩টি আসন জিতেছে। ব্যাপারটা এই ভাবে দেখছি।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানিক দে-র আক্ষেপ, ‘‘মথা এই ভাবে ভোট না পেলে শুধু আমরাই ২৬-২৭টা আসন পেয়ে যাই!’’ সিপিএম নেতৃত্বের মতে, মথার আন্দোলন যেখানে জনজাতির অধিকার সংক্রান্ত, সে ক্ষেত্রে জনজাতি অধ্যুষিত আসনে তারা বেশি করে লড়ে অন্য জায়গা বাকি বিরোধীদের ছেড়ে দিলে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরা আর হত না!
ফল ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রদ্যোৎ। জনজাতি উন্নয়নের বিষয়ে ‘গঠনমূলক’ ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন। বিধানসভায় তাঁদের অবস্থান কী হবে? প্র্দ্যোৎ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বলছেন, ‘‘বিরোধী আসনে বসব। তবে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে নয়, আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে। জনজাতিদের অধিকার আদায়ে লড়াই করব, ওই সংক্রান্ত উন্নয়নের প্রশ্নে গঠনমূলক ভূমিকাই নেব।’’ পরবর্তী কৌশল বিশদে ঠিক করার জন্য আজ, শুক্রবারই নতুন বিধায়কদের সঙ্গে বসবেন বলেও ঠিক করেছেন।