মন্দির মার্গ থানায় তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। ছবি: এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।
নয়াদিল্লি মন্দির মার্গ থানা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে বার বার মাইকে ঘোষণা করছেন, থানা চত্বরে অবস্থানকারী তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা ‘স্বতন্ত্র’ (মুক্ত)। তবু দুপুর গড়াতে বন্ধ ফটকের ও পার থেকেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন দোলা সেন-ডেরেক ও’ব্রায়েনরা!
দোলা বললেন, ‘‘আমাদের দু’জন সাংসদ, নাদমুল হক এবং সাগরিকা রাতভর থানায় থাকার পরে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু গেট বন্ধ করে তাঁদের আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেউ বেরোলে তিনি ঢুকতে পারবেন না। যাঁরা ভিতরে আছেন, তাঁরা বেরোতে পারবেন না। বুঝুন অবস্থা।’’
লোকসভা ভোটের আগে চার কেন্দ্রীয় এজেন্সি— সিবিআই, ইডি, এনআইএ এবং আয়কর বিভাগ বিজেপির সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে অভিযোগ তুলে ওই চার সংস্থার প্রধানকে বদলির দাবি তুলেছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে সোমবারই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করেছিল তৃণমূলের ১০ জনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের কাছে অভিযোগ এবং দাবি জানিয়ে বাইরে এসে ধর্নায় বসে পড়ে তারা। ২৪ ঘণ্টা ধর্নায় বসার ঘোষণা করেন তৃণমূল সাংসদেরা। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই সেই ধর্না তুলে দিতে আসরে নামে দিল্লি পুলিশ।
প্রথমে পুলিশ তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কমিশনের সামনে থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার আগে তারা ধর্না তুলবে না, এমন দাবিতেই অটল থাকে তৃণমূল প্রতিনিধি দল। তার পরই ধর্না তুলতে শুরু করে পুলিশ। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি। একে একে বিক্ষোভরত তৃণমূল সাংসদদের টেনেহিঁচড়ে বাসে তুলে মন্দির মার্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দোলার দাবি, তাঁদের নিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরে দিল্লি পুলিশের গাড়ি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ থানায় আনা হয়। তাঁরা আটক না গ্রেফতার, তা-ও জানানো হয়নি। কোনও কাগজ দেওয়া হয়নি। অবশেষে রাত সাড়ে ১২টার পরে জানানো হয় তাঁরা মুক্ত।
দোলার মন্তব্য, ‘‘দলে তিন জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন। তা সত্ত্বেও ফৌজদারি দণ্ডবিধির কোন ধারায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আটকে রাখা হল, তা জানতে চাইছি আমরা। বলা হচ্ছে, আমরা স্বতন্ত্র (মুক্ত)। দিল্লি পুলিশ নাটক করে মাইকে ঘোষণা করছে, মুক্তি দেওয়া হলেও আমরা নাকি বিনা কারণে থানায় রয়েছি। কিন্তু থানার গেট বন্ধ। সাংসদদের তো ডানা নেই। যে উড়ে বন্ধ গেটের ও পারে চলে যাবেন।’’ এমনকি, মঙ্গলবার সকালে থানার অন্দরে ধর্নারত তৃণমূলের প্রতিনিধিরা দু’টি পোস্টারে নিজেদের বক্তব্য লেখার চেষ্টা করলে দিল্লি পুলিশ তাতে বাধা দেয় বলে তাঁর অভিযোগ।
দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানাতে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল হেনস্থার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে সোমবারই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূলের ১০ জন প্রতিনিধির একটি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে অভিষেক অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার পাশাপাশি এ বার নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে বিজেপি। কমিশন বিজেপির বশ্যতা স্বীকার করেছে বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবারও সরব হয়েছেন অভিষেক। ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘কেন গণতন্ত্র আমার মাতৃভূমিতে লুণ্ঠিত হচ্ছে প্রতিপদে? সোমবার রাজধানীর বুকে আমাদের ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে যা ঘটল, তা গণতন্ত্রের মৃত্যু ছাড়া আর কী ? দিল্লির পুলিশ কি আদৌ মানুষের সেবা করছে, না কি তারা দিল্লির স্বৈরতন্ত্রের দলদাস হয়ে গিয়েছে?’’ মন্দির মার্গ থানায় তৃণমূলের সাংসদ এবং প্রাক্তন সাংসদদের সেই প্রতিনিধি দলে দোলা ও ডেরেক ছাড়া রয়েছেন সাকেত গোখলে, বিবেক গুপ্ত, অর্পিতা ঘোষ, শান্তনু সেন, আবীররঞ্জন বিশ্বাস। এ ছাড়াও রয়েছেন তৃণমূলের যুবনেতা সুদীপ রাহা।