হেমন্ত সোরেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মহারাষ্ট্র-জয়ে মহিলা ভোট সহায়ক হলেও ঝাড়খণ্ডে বিজেপির জয়ের পথে কাঁটা ছড়ালেন সেই মহিলারাই! নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে বসে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছেন পদ্মনেতৃত্ব।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বলছে, এ বার ঝাড়খণ্ডে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন ৯১ লক্ষেরও বেশি মহিলা। অন্য দিকে, সে রাজ্যের ৮৫ লক্ষের বেশি পুরুষ ভোটের লাইনে দাঁড়ান। অর্থাৎ, ভোট দেওয়ার নিরিখে পুরুষদের টেক্কা দেন মহিলারা। গত লোকসভা ভোটেও ঝাড়খণ্ডে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। তবে সে বার এই লিঙ্গগত ব্যবধান ছিল চার লক্ষের একটু কম। ঘটনাচক্রে, গত লোকসভায় এনডিএ ঝাড়খণ্ডের ৯টি আসনে জয়ী হয়েছিল। আর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ জয়ী হয়েছিল পাঁচটি আসনে।
রাজনীতিতে ছ’মাস সময়কে অনেকটা সময় বলেই দাবি করে থাকেন ভোটপণ্ডিতেরা। ঝাড়খণ্ডও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। বাংলার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের আদলেই ঝাড়খণ্ডে ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’ চালু করেছিল হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কংগ্রেস সরকার। এই প্রকল্পে সে রাজ্যের ২১ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। অনেকেই মনে করছেন, মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র জয়ে যেমন সহায়ক হয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রী লাডলি বহিন যোজনা’, তেমনই ঝাড়খণ্ডেও হেমন্তের জয়ে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’।
বিজেপির যাবতীয় সম্ভাবনায় ‘কাঁচি’ চালিয়েছেন তরুণ কুড়মি নেতা জয়রাম মাহাতোও। কুড়মি-মাহাতো ভোটে পাওয়ার লক্ষ্যে মোদী-শাহের দল জোট বেঁধেছিল প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদেশ মাহাতোর ‘অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আজসু)-এর সঙ্গে। কিন্তু চলতি বছরেই তৈরি হওয়া জয়রামের দল ‘ঝাড়খণ্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারী মোর্চা’ (জেএলকেএম) বেশ কিছু আসনে ভোট কেটে ‘ইন্ডিয়া’র জয় নিশ্চিত করেছে। সিল্লি, বোকারো, চক্রধরপুর, গিরিডির মতো অন্তত ১১টি আসনে এনডিএ-র জয়ে কাঁটা বিছিয়েছে জয়রামের দল। জেএলকেএম-এর প্রতীক কাঁচি। বিজেপি নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন যে, কাঁচির ঘায়েই ঝাড়খণ্ডে মূর্ছা গিয়েছে পদ্ম।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে মোদী, অমিত শাহেরা ধারাবাহিক ভাবে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রদেশের’ অভিযোগ করেছেন। নাম না করে নিশানা করেছেন একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে। স্লোগান দিয়েছেন, ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’। কিন্তু ভোটের ফলে স্পষ্ট যে, ওবিসি, দলিত এবং আদিবাসী ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁদের সেই কৌশল সফল হয়নি। তাই ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনায় এ বার খাতাই খুলতে পারেনি বিজেপি। বিজেপি শিবিরের একাংশ মনে করছেন, আদিবাসীদের জন্য তৈরি রাজ্যে ১০ বছর আগে (২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে জেতার পরে) ওবিসি নেতা রঘুবর দাসকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে ঝাড়খণ্ডে ‘হরিয়ানার খট্টর মডেল’ (জাঠপ্রধান রাজ্যে অ-জাঠ মুখ্যমন্ত্রী) চালু করে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন মোদী-শাহেরা। কিন্তু তাতে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গিয়েছে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে। গত পাঁচ বছরে তা মেরামত করা যায়নি। মোছা যায়নি ‘আদিবাসী বিরোধী’ তকমাও।
ঝাড়খণ্ডে বিজেপির জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার এটাই যে, ভোট শতাংশের নিরিখে তারাই সে রাজ্যের বৃহত্তম দল। তবে ভোটের পাটিগণিত আর রসায়ন সর্বদা এক কথা বলে না। বিজেপি ঝাড়খণ্ডের ৬৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে পেয়েছে ৩৩.২ শতাংশ ভোট। আর ৪১টি আসনে লড়ে জেএমএম পেয়েছে ২৩.৪ শতাংশ ভোট। যদিও জেএমএম এবং কংগ্রেস, দুই দলের মিলিত ভোট শতাংশ ৩৯ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় জেএমএম, কংগ্রেস, আরজেডি, সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর জোট পেয়েছে ৫৬টি আসন। আর বিজেপি, আজসু, জেডিইউ আর এলজেপি(আর)-এর জোট জয়ী হয়েছে ২৪টি আসনে।