দিল্লির জাতীয় সংগ্রহশালা। — ফাইল চিত্র।
দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ প্রকল্পের ‘সাফল্য’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চলছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, স্বাধীন ভারতের সাড়ে সাত দশকের ইতিহাসকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে মুছে দিতে চাইছে কেন্দ্র। আর সেই অভিযোগের অন্যতম ‘প্রমাণ’ হিসাবে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল ভিস্টা এলাকা থেকে জাতীয় সংগ্রহশালা (ন্যাশনাল মিউজিয়াম)-র উৎখাত করে তার প্রাচীন ভবনটি ভেঙে ফেলার ঘটনা।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ শনিবার জাতীয় সংগ্রহশালার একটি ছবি এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘স্থানান্তর হলেই তা রক্ষা পাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।’’ কংগ্রেস নেতার ইঙ্গিত, মোদী সরকার পরিকল্পিত ভাবে দিল্লি থেকে পূর্বতন শাসকদের সমস্ত ‘চিহ্ন’ মুছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, জাতীয় সংগ্রহশালাও তার শিকার হতে পারে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর এক্স হ্যান্ডলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর পোস্ট করেছেন। তাতে রয়েছে ওই পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের কথা।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তারুর লিখেছেন, ‘‘ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি ভেঙে একটি সরকারি ভবন গড়া হবে। সেখানে হয়ত বছরের দুয়েকের জন্য ঠাঁই পাবে জাতীয় সংগ্রহশালা! বর্বরতার বিশুদ্ধ উদাহরণ আর কী হতে পারে!’’ প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের দাবি জাতীয় সংগ্রহশালার বদলে ‘যুগে যুগে ভারত’ নামে নতুন সংগ্রহশালা গড়া হচ্ছে। তাতে তুলে ধরা হবে ভারতের পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জুলাই মাসে দিল্লির ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ্জিবিশন কাম কনভেনশন সেন্টার’ (আইইসিসি) ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই তিনি ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘর তৈরির কথা ঘোষণা করেন। তার আগে মে মাসে দিল্লির প্রগতি ময়দানের এক অনুষ্ঠানে ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘরের মডেল ভার্চুয়ালি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সরকারি সূত্রের খবর, পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘরে মোট আটটি বিভাগ থাকবে।
আট বিভাগের মধ্যে থাকবে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান, প্রাচীন থেকে মধ্যযুগ, মধ্যযুগ, মধ্যযুগ থেকে উত্তরণ পর্ব, আধুনিক ভারত, ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ের ইতিহাস। মোট ১.১৭ লক্ষ বর্গমিটার জুড়ে তৈরি হচ্ছে এই সংগ্রহশালা। গড়তে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। তিন তলা এই জাদুঘরে মোট ৯৫০টি কক্ষ থাকবে বলেও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।