২০১৫। কংগ্রেসের তৎকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে। —ফাইল চিত্র।
মনমোহন সিংহ মৃদুভাষী ছিলেন, ভদ্র ছিলেন। ইস্পাতের মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। নিজের হাতে ভারতের অর্থনীতির রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথমে ১৯৯১ সালের বাজেট, তার পরে ১৯৯২ ও অন্যান্য বছরের বাজেটে। মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বে বৈপ্লবিক আইন এসেছিল। একশো দিনের কাজ বা রোজগার গ্যারান্টি, আদিবাসী অধিকার, প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার, খাদ্য সুরক্ষা এবং জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন। ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তি একটা মাইলফলক ছিল, যা দুনিয়ার মঞ্চে ভারতের স্থান উঁচুতে তুলে ধরেছিল। মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বেই দেশের ইতিহাসে আর্থিক বৃদ্ধি সর্বোচ্চ হার ছুঁয়েছিল।
মনমোহন সিংহ একই সঙ্গে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে কেমব্রিজে তিনি অ্যাডাম স্মিথ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
অন্তরের গভীর থেকে মনমোহন সিংহ এক জন ভদ্র মানুষ ছিলেন। তাঁর মনে কারও প্রতি কোনও বিদ্বেষ ছিল না। তিনি আলোচনা, ঐকমত্য এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও সকলকে নিয়ে চলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন, তা মেনে চলতেন। নম্রতা ও সততা ছিল তাঁর পরিচিতি। যারা তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করত, তারা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় তুলে ধরত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহ এমন অনেক পদক্ষেপ করেছেন, যাকে তাঁর উত্তরসূরি নিজের সাফল্য হিসেবে বিপণন করেছেন। কিন্তু মনমোহন সিংহ কিছুই মনে করেননি। তাঁর মুখে শুধু পরিচিত হাসি দেখা গিয়েছে।
মনমোহন সিংহই আমাকে ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে যোজনা কমিশনে নিয়োগ করেছিলেন। আমার সৌভাগ্য, তার পরে ৩৮ বছর আমি ওঁর সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছি। মনমোহন সিংহ তাঁর নিজস্ব অননুকরণীয় পন্থায় ইতিহাসে নিজের ছাপ রেখে গেলেন, যা কোনও দিনও মুছে ফেলা যাবে না।
(ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক)