গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।
মা এবং চার বোনকে খুনের কথা যুবক স্বীকার করেছেন ঠিকই, কিন্তু কেন খুন করলেন— সেই রহস্যই কাটছে না লখনউয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। হত্যার পর পরই একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন অভিযুক্ত আরশাদ। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, এলাকাবাসী তাঁর মা-বোনেদের নানা ভাবে হেনস্থা করতেন। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। ওঁদের যদি কোনও ক্ষতি হয়ে যায়, এই আশঙ্কাই করতেন সব সময়। আর সেই ভয়েই মা এবং চার বোনকে খুন করেছেন।
তবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, অভিযুক্ত আরশাদ খুনের ঘটনায় যা দাবি করছেন, তা সত্য নয়। এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে হেনস্থার যে অভিযোগ তুলেছেন, তা মিথ্যা বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আগরার যে মহল্লায় থাকত আরশাদের পরিবার, সেখানে খোঁজ নেওয়া হয়। আরশাদের মা এবং চার বোনের খুনের ঘটনাটি জানার পর তাঁরা আরশাদকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের দাবি, আরশাদের পরিবারের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করা হয়নি। হেনস্থা করা হয়নি। বরং তাঁরা পাড়ার লোকেদের সঙ্গে কোনও কথা বলতেন না। মেলামেশা করতেন না। আর এখান থেকেই খুনের কারণ নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে তদন্তকারীদের মনে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি এই খুনের নেপথ্যে অন্য চক্রান্ত রয়েছে আরশাদ এবং তাঁর বাবার? যদিও আরশাদের বাবার এখনও কোনও হদিস পায়নি পুলিশ। তদন্তকারীরা বলছেন, তাঁকে ধরতে পারলে এই খুনের কারণ সম্পর্কে অনেক তথ্যই পাওয়া যাবে। পুলিশের কয়েকটি দল সম্ভল এবং আগরায় পৌঁছেছে আরশাদের বাবার খোঁজে।
একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, এলাকাবাসীর ‘কাঁধে বন্দুক রেখে’ খুনের আসল কারণকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন আরশাদ? পাশাপাশি তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, শুধু আরশাদ এবং তাঁর বাবা নয়, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িয়ে রয়েছেন। আর সেই দিশাতেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। আরশাদকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তিনি অপরাধের সিনেমা এবং সিরিয়াল দেখতে ভালবাসেন। তাঁর প্রিয় ছবি অজয় দেবগন অভিনীত ‘দৃশ্যম’। তদন্তকারীদের আরশাদ জানিয়েছেন, ১০ বার এই ছবিটি দেখেছিলেন। ছবির প্রতিটি কথা তাঁর ঠোঁটস্থ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মা এবং বোনেদের খুনের জন্য আগরা থেকে ৩০ ডিসেম্বর লখনউয়ের উদ্দেশে রওনা দেন আরশাদ। ওই দিন সন্ধ্যায় লখনউয়ের চারবাগ স্টেশনে নেমে একটি হোটেলে ওঠেন মা, চার বোন এবং বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। হোটেলের ১০৯ নম্বর ঘর বুক করেন। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চারবাগের আশপাশ ঘুরে দেখেন সকলে মিলে। রাতে বাইরে থেকে খাবার আনেন আরশাদ। মা এবং চার বোনের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে চলে যান পাঁচ জনই। কিন্তু আরশাদ এবং তাঁর বাবা সারা রাত জেগে ছিলেন। ঘরের ভিতরে পায়চারি করছিলেন। হোটেলের ম্যানেজারের দাবি, রাত ১১টা নাগাদ বাইরে বার হন দু’জনে। গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে জানানোয় তাঁরা আবার হোটেলের ঘরে চলে যান। ১ জানুয়ারি ভোর ৪টে নাগাদ আবার আরশাদ এবং তাঁর বাবা চা খাওয়ার নাম করে হোটেলের বাইরে যান। সকাল ৭টার সময় পুলিশ এসে হোটেল থেকে পাঁচ জনের দেহ উদ্ধার করে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, খাবার খেয়ে মা এবং চার বোন ঘুমিয়ে পড়তেই প্রথমে চার বোনের হাতের শিরা কেটে দেন। তার পর ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারেন। কিন্তু তাঁর মায়ের হাতের শিরা কাটেননি। শুধু শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।