Karnataka Assembly Election 2023

বিজেপিই ফিরবে? না কি ক্ষমতার হাত-বদল? কর্নাটকের ভোটদাতারা রায় দেবেন বুধবার

২২৪ আসনের কর্নাটক বিধানসভা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩ বিধায়ক। ঘটনাচক্রে, ২০০৭ সাল থেকে চার দফায় ক্ষমতা দখল করলেও কখনোই সেই জাদু সংখ্যা ছুঁতে পারেনি বিজেপি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ২২:৩২
Polling for Karnataka Assembly Election to be held on 10 May 2023

কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের আগে চলথে বুথে বুথে ইভিএম পাঠানোর কাজ। ছবি: পিটিআই।

রাত পোহালেই ভোটগ্রহণ শুরু কর্নাটকে ২২৪টি বিধানসভা আসনে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানাল নির্বাচন কমিশন। সব বুথে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। সেই সঙ্গে সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থাও থাকছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে বুথে বুথে ইভিএম পৌঁছে দেওয়ার কাজ।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এ বার কর্নাটকে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৩০ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে প্রথম বারের ভোটারের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৭১ হাজার।’’ মোট ভোটারদের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৬৬ লক্ষ পুরুষ এবং ২ কোটি ৬২ লক্ষ মহিলা।

Advertisement

গত আড়াই দশকের মতোই বুধবারও ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চলেছে কর্নাটক। ক্ষমতাসীন বিজেপি, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন জেডি(এস)-এর মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই, বিজোপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিটি রবি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার এবং তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (কংগ্রেস), জগদীশ শেট্টার (কংগ্রেস) এবং এইচডি কুমারস্বামী (জেডি-এস)। ভোটের গণনা আগামী শনিবার (১৩ মে)।

ইতিহাস বলছে, আশির দশকে প্রয়াত রামকৃষ্ণ হেগড়ের নেতৃত্বাধীন জনতা দল উপর্যুপরি দু’টি বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করেছিল। তার পর থেকে প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষমতার পরিবর্তন দেখেছে দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্য। এ বার সেই ধারা বদলাবে বলে ক্ষমতাসীন বিজেপির দাবি। অন্য দিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস গত ৪ দশকের ধারা মেনে ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।

২২৪ আসনের কর্নাটক বিধানসভা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩ বিধায়ক। ঘটনাচক্রে, ২০০৭ সাল থেকে ৪ দফায় ক্ষমতা দখল করলেও কখনওই সেই সংখ্যা ছুঁতে পারেনি পদ্ম-শিবির। তাদের ৪ মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কেউই ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদে থাকেননি। এর মধ্যে ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজেপির ফল সবচেয়ে ভাল হয়েছিল। তারা জিতেছিল ১১০টি আসনে।

২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে ১০৪টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস ৮০ এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার জেডি(এস) ৩৭টিতে জেতে। কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট পরবর্তী সমঝোতা করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দেবগৌড়া-পুত্র কুমারস্বামী। কিন্তু ২০১৯-এর জুলাই মাসে দু’দলের দেড় ডজনেরও বেশি বিধায়ক ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি।

এ বার কয়েকটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত, কংগ্রেস নতুন বিধানসভায় বৃহত্তম দল হতে পারে। হিজাব বিতর্ক বা টিপু সুলতান প্রসঙ্গ ছাপিয়ে কন্নড় ভোটারদের মধ্যে গত সাড়ে ৩ বছর ধরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলেও কয়েকটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত। সেই সঙ্গে কর্নাটকের সরকারি দুগ্ধ প্রকল্প ‘নন্দিনী’র পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের আমূলকে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া ঘিরে বিতর্কও ভোটের ইস্যু হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রচারের শেষবেলায় মরিয়া বিজেপি মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে কর্নাটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন বজরং দল এবং কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকেই ওই প্রসঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিটি সভায় নিয়ম করে ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেছেন।

কংগ্রেসের অভিযোগ, হার বাঁচাতে মরিয়া মোদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বিতর্কিত সিনেমা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র প্রসঙ্গ তুলেছেন। প্রচারের শেষপর্বে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর নাম করে দেশবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সঙ্গে কংগ্রেসের ‘যোগসূত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের রাজ্যে ভোটের প্রচারে বার বার প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

সাধারণ ভাবে কর্নাটকে ভোটে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ বিশেষ ওঠে না। কিন্তু ভোট কিনতে টাকা এবং মদ বিলির অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত সপ্তাহ থেকে গোয়া-সহ কয়েকটি পড়শি রাজ্যে কর্নাটক সীমানাবর্তী জেলাগুলিতে মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। পাশাপাশি নিয়ম করে রাস্তাগুলিতে ‘নাকা তল্লাশি’ অভিযান চলছে। গত এক মাসের ধারাবাহিক অভিযানে মোট ৩৭৫ কোটি হিসাব বহির্ভূত নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

আরও পড়ুন
Advertisement