গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) ব্যবস্থা চালু হলে ভারতীয় গণতন্ত্র আরও প্রাণবন্ত হবে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হয় ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ। বৈঠক শেষের পরে প্রধানমন্ত্রী এক্স পোস্টে লেখেন, ‘‘মন্ত্রিসভা এক সঙ্গে ভোট করানোর লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দজির নেতৃত্বে এই প্রচেষ্টার আমি প্রশংসা করছি।’’
সেই সঙ্গে মোদী লিখেছেন, ‘‘আমাদের গণতন্ত্রকে আরও প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক করার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সারা দেশে এক সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করার উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মনোযোগ সরানোর জন্য এটি বিজেপির একটি কৌশল। এটি সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্রের পরিপন্থী, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভাবনারও বিরুদ্ধে। দেশ এটা কখনও এই উদ্যোগ মেনে নেবে না।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের সুপারিশ অনুমোদনের পরেই তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সমাজমাধ্যমে পোস্টে লেখেন, ‘‘গণতন্ত্রবিরোধী বিজেপির আরেকটি সস্তা স্টান্ট হল ‘এক দেশ, এক ভোট’ । কেন হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়নি? মহারাষ্ট্র সরকার এই জুনের বাজেটে লাডকি বহিন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপ অগস্টে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে এবং দ্বিতীয় ধাপ অক্টোবরে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছবে। আপনারা এক সঙ্গে তিনটি রাজ্যের ভোট করাতে পারেন না আর ‘এক দেশ এক ভোটে’র কথা বলছেন।’’
এর পরে কেন্দ্রকে নিশানা করে ডেরেকের মন্তব্য, ‘‘আর এটাও বলুন, কতগুলি রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ কমানো বা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কতগুলো সংবিধান সংশোধন করা হবে! ক্লাসিক মোদী-শাহ জুমলা।’’ বিরোধীরা কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো বুধবার দাবি করেছেন, কোবিন্দ কমিটির কাছে ৪৭টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল মতামত জানিয়েছিল। ৩২টি দল ‘এক দেশ এক ভোট’ সমর্থন করেছে, বিরোধিতা করেছে ১৫টি রাজনৈতিক দল। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, শিবসেনা (উদ্ধব), সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ।