সংসদে ‘রংবাজি’কাণ্ডে ধৃত অভিযুক্তেরা। —ফাইল চিত্র ।
দেশে ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সংসদে রংবোমা ছোড়ার ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তেরা। চেয়েছিলেন, যাতে সরকার তাঁদের সমস্ত দাবি পূরণে বাধ্য হয়! অভিযুক্তদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে এমনটাই জানাল দিল্লি পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ আদালতে এ-ও জানিয়েছে, সংসদে ‘হামলা চালানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য’ এবং এর নেপথ্য ‘অন্য কোন শত্রু দেশ বা জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে’ কি না, তা বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘সুপরিকল্পিত হামলার’ পিছনে কোনও বৃহত্তর এবং গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বুধবার অর্থাৎ, ১৩ ডিসেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে এবং জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি নামে দুই যুবক। অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভায় জ়িরো আওয়ারে দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। পরে সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন অমল শিন্ডে এবং নীলম। তাঁদের হাতেও ছিল ‘স্মোক ক্র্যাকার’। তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ভিকি শর্মা নামে এক মদতকারীকেও। পরে দিল্লি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ওই ঘটনার ‘মূল পাণ্ডা’ ললিত ঝা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনা ঘটানোর পর হোয়াট্সঅ্যাপে সেই ঘটনার ভিডিয়োও প্রথম পাঠিয়েছিলেন ললিত। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারির পর থেকেই জেরা চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরা চলাকালীন তদন্তকারীদের ললিত জানিয়েছেন, সংসদে হানার জন্য ‘প্ল্যান এ’ এবং ‘প্ল্যান বি’ বানিয়ে রাখা হয়েছিল। যদি ‘প্ল্যান এ’ ব্যর্থ হত, তা হলে ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগ করা হত। সংসদের ভিতরে দু’জন নয়, তিন জনের হানা দেওয়ার কথা ছিল। সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি ছাড়াও তৃতীয় ওই ব্যক্তি কে, জেরায় তা জানতে পেরেছে পুলিশ। তৃতীয় ওই ব্যক্তি হলেন মহেশ। কিন্তু আচমকাই সেই পরিকল্পনা বদলানো হয়েছিল। মহেশকেও আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানতে পেরেছে, অন্তত দু’বছর ধরে এই সংসদ হানার পরিকল্পনা করছিলেন ললিত এবং তাঁর দলবল। ধীরে ধীরে সংসদের নিরাপত্তা বলয় টপকে ভিতরে ঢোকার ছক কষেছিলেন। অবশেষে গত বুধবার সেই পরিকল্পনা সফল করেন ললিত-সহ বাকি অভিযুক্তেরা। সেই ঘটনারই তদন্তে নামার পর পুলিশের হাতে অনেক নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।