মৃত তৃণমূল নেতা আবুল নাসার। —ফাইল চিত্র।
বিছানা থেকে সিলিংয়ের উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট। যা তৃণমূল নেতার উচ্চতার চেয়েও বেশি। ফলে সিলিং ছুঁতে গেলে চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু ঘটনার সময় তো ঘরে সে রকম কোনও আসবাবই ছিল না! তা হলে মন্দারমণির ওই হোটেলে গলায় ফাঁস দিয়ে সিলিং থেকে কী ভাবে ঝুলে পড়লেন তৃণমূল নেতা? ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মেলার পরে এই প্রশ্নই তুলছেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
গত শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলের ঘর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল। এর পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে তৃণমূল নেতার এক বান্ধবী এবং তাঁর এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁরা এখন পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পায় পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, প্রাথমিক রিপোর্টে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারই ইঙ্গিত মিলেছিল।
যদিও আত্মহত্যা তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে মৃত তৃণমূল নেতার পরিবার। শুরু থেকেই তাদের দাবি, পুলিশ অনেক কিছু আড়াল করছে! পুলিশ যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ বার পরিবারের যুক্তি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিত থাকলেও, গলায় ফাঁস দিয়ে সিলিং থেকে ঝুলে আত্মহত্যা করার জন্য যে সরঞ্জাম প্রয়োজন, তা হোটেলের ঘরে ছিল না। কোনও চেয়ার ছাড়া বিছানা থেকে সিলিং ছোঁয়া সম্ভবই ছিল না আবুলের পক্ষে। তৃণমূল নেতার স্ত্রী তথা আমডাঙার আদাহাটা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া পরভিন বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছি, আবুল আত্মহত্যা করেনি। যারা হোটেলে আবুলের দেহ আনতে গিয়েছিল, তাদেরও একই মত। ওই ঘরে সিলিং থেকে ঝুলে আত্মহত্যা সম্ভব নয়। গোটাটাই পরিকল্পিত চক্রান্ত।’’
হোটেলের এক কর্মীও জানান, আবুল এবং তাঁর বান্ধবীর ভাড়া নেওয়া ঘরটিতে একটি ‘কিং-সাইজ়’ বিছানা ছিল। মেঝে থেকে সেই বিছানার উচ্চতা মেরেকেটে তিন ফুট। আর বিছানা থেকে সিলিংয়ের উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট। ফলে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার আবুল কী করে সিলিং ছুঁলেন, তা নিয়েই খটকা তৈরি হয়েছে পরিবারের লোকেদের মনে। আবুলের মা তারুণা বিবির দাবি, খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে বেহুঁশ করে গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁর ছেলেকে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবুলের মায়ের অভিযোগ, ‘‘হোটেলের ঘর আমাদের ভাল ভাবে দেখতেই দেওয়া হয়নি। পুলিশ বড্ড তাড়াহুড়ো করছিল। আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু লুকোতে না-চাইলে পুলিশ এ ধরনের আচরণ করবে কেন?’’
পুলিশ অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। তার প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে এসেছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’