মুকেশ অম্বানীর সন্তানেরা। — ফাইল চিত্র।
দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি তিনি। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিত্তশালীদের তালিকাতেও প্রথমের দিকেই নাম রয়েছে তাঁর। কিন্তু রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ অম্বানীর নিজের রোজগার ‘শূন্য’! নিজের সংস্থার আধিকারিকদের মোটা বেতন দিলেও গত তিন বছর ধরে এক টাকাও পারিশ্রমিক নেননি তিনি!
কিছু দিন আগে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর তরফে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই রিপোর্ট জানাচ্ছে, কোভিড অতিমারির কারণে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে স্বেচ্ছায় বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুকেশ। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রিলায়্যান্স প্রধান সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছেন। শুধু মুকেশ নন, তাঁর স্ত্রী নীতা, দুই পুত্র আকাশ ও অনন্ত এবং কন্যা ইশাও রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর থেকে কোনও বেতন নেন না বলে সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রিলায়্যান্স থেকে নিয়মিত বেতন নিতেন মুকেশ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮-’০৯ থেকে ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বার্ষিক বেতন হিসাবে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা করে নিতেন মুকেশ।
অগস্টে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভায় মুকেশ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর তিন সন্তানকে সংস্থার পরিচালন পর্ষদে (‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস’ বা বিওডি) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিওডি বৈঠকে যোগদানের জন্য মুকেশের পুত্র-কন্যাদের একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে বার্ষিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সংস্থার অর্জিত মুনাফার উপর ‘সিটিং ফি’ এবং কমিশন পাবেন তাঁরা। ২০১৪ সালে স্ত্রী নীতাকে রিলায়্যান্স পরিচালন পর্ষদের সদস্য করেছিলেন মুকেশ। সংস্থার ২০২২-’২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে ওই অর্থবর্ষে ছ’লক্ষ টাকা ‘সিটিং ফি’ এবং দু’কোটি টাকা কমিশন পেয়েছেন নীতা।
নিজের এবং পরিবারের জন্য বেতন না নিলেও মুকেশ রিলায়্যান্সের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর পদে আসীন তাঁর দুই তুতো ভাই নিখিল মেসওয়ানি এবং হিতল মেসওয়ানি-সহ অন্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জন্য মোটা বেতন এবং আনুষঙ্গিক ভাতা বরাদ্দ করেছেন। আশির দশকের গোড়ায় প্রয়াত ধীরুভাই অম্বানীর জমানায় রিলায়্যান্সে যোগ দেওয়া নিখিল এবং হিতল বেতন, কমিশন এবং অন্যান্য ভাতা মিলে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী থেকে বছরে ২৫ কোটি টাকারও বেশি উপার্জন করেন।
অগস্টে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বার্ষিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত মুকেশ সংস্থার চেয়ারম্যান থাকবেন। তবে এ বার উত্তরসূরিদেরও দায়িত্ব বুঝিয়ে জায়গা পাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আকাশ, ঈশা, অনন্তদের মঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থার রাশ তিন সন্তানের হাতে ছেড়েছেন মুকেশ। রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর টেলিকম সংস্থা জিয়ো ইনফোকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান হয়েছেন আকাশ। রিলায়্যান্স রিটেলের দায়িত্ব মুকেশ দিয়েছেন কন্যা ঈশাকে। অনন্ত হয়েছেন রিলায়্যান্স এনার্জির প্রধান।