ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’। সৌজন্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার ৭৮তম সাধারণ সভায় বক্তৃতার গোড়াতেই রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘ভারতের নমস্কার গ্রহণ করুন।’’
বক্তৃতায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে সন্ত্রাস এবং উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আবেদন জানিয়ে খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি কানাডা সরকারের ‘নরম নীতি’কে নিশানা করেন জয়শঙ্কর। তারই পাশাপাশি মোদীর সভাপতিত্বে নয়াদিল্লিতে সদ্যসমাপ্ত জি২০-র ‘সাফল্যের’ কথা তুলে ধরলেন তিনি। বললেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আস্থাবর্ধনে রাষ্ট্রপুঞ্জ সাধারণ সভার প্রতিটি পদক্ষেপকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবে ভারত।’’
দীর্ঘদিন ধরেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকার শিখ উগ্রপন্থী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে নরম মনোভাব নিয়ে চলছে বলে ভারতের অভিযোগ। গত সপ্তাহে ট্রুডো সে দেশের পার্লামেন্টের বক্তৃতায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর বিরুদ্ধে কানাডা়র মাটিতে খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের জন্য দায়ী করেন। ঘটনাচক্রে, ট্রুডোর ওই বিবৃতির পরেই কানাডার এক ভারতীয় এক কূটনীতিককে ‘র’-এর অফিসার বলে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা হয়। পাল্টা কানাডার এক কূটনীতকে বহিষ্কার করে ভারত। কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সাময়িক বিধিনিষেধ বলবৎ করা হয়।
সেই ঘটনাপর্বের দিকে ইঙ্গিত করে মঙ্গলবার জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি সম্পর্কে কয়েকটি দেশ সচেতন। কিন্তু তারাই আবার অন্যকে উপদেশ দিতে পিছপা হয় না।’’ সোমবার নিউ ইয়র্কে ‘ইন্ডিয়া–ইউএন গ্লোবাল সাউথ’ সংক্রান্ত একটি আলোচনাচক্রে বিশ্বে বিভাজনবাদের নিন্দা করে অনুন্নত দেশের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে মেরুকরণ খুবই তীব্র হচ্ছে ও উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে।’’ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জে করোনা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্ণ এবং আর্থিক শক্তির বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হন জয়শঙ্কর। বলেন, ‘‘ভারত ১০০টি দেশকে কোভিড টিকা দিয়েছে। কোথাও এ ক্ষেত্রে কোনও অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি।’’
নয়াদিল্লির জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে স্থায়ী সদস্য হিসাবে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গও এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জে জয়শঙ্করের বক্তৃতায়। ভারতেই যে জি২০ কার্যত জি২১ হয়ে গিয়েছে, সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০২২ সালের ডিসেম্বরে যে দায়িত্ববোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারত জি২০-র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল, তা যথাযথ ভাবে পালন করা হয়েছে।’’ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতি ভারতের আচরণের কোনও তারতম্য হয় না দাবি করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা এক পৃথিবী এক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসী।’’ উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য যে ‘গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনের বার্তা দিয়ে জি২০ শুরু হয়েছিল, তা খুবই প্রশংসিত হয়েছে বলে জয়শঙ্করের দাবি।