India and Bharat

‘ইন্ডিয়া’ নয়, স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’! এ বার নির্দেশিকা এনসিইআরটির

সেপ্টেম্বরের গোড়ায় জি২০ শীর্ষবৈঠকে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতির নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরে জল্পনা শুরু হয়, দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদী সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২০

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন সংবিধান সংশোধন করে ‘ইন্ডিয়া’ ছেঁটে ফেলে শুধু ভারত নামটিকেই স্বীকৃতি দিতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। এই আবহে স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘ইন্ডিয়া’ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করল কেন্দ্র।

Advertisement

কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ) অনুমোদিত সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে নাম বদলের নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে। বুধবার সংবাদ সংস্থা এনএনআই জানিয়েছে, এনসিইআরটি অনুমোদিত সমস্ত স্কুল পাঠ্যপুস্তকে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ছেঁটে ফেলে ‘ভারত’ লেখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিষয়ক কমিটি সুপারিশ করেছিল। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের গোড়ায় জি২০ শীর্ষবৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদী সরকার। কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি২০-র রাষ্ট্রনেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ কথাটি লেখা হয়। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা এমন বদলের কারণ কি?

ওই বিতর্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইন্দোনেশিয়া সফরের সূচি এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রকাশ করেছিলেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। সেখানে মোদীর পদ লেখা হয়েছিল, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স’) আত্মপ্রকাশের পরেই ‘সক্রিয়তা’ দেখা গিয়েছিল বিজেপি শিবিরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, নামমাহাত্ম্যের জেরে বিরোধী শিবির জাতীয়তাবাদে ভাগ বসাতে পারে বুঝেই মোদী বিরোধী শিবিরকে খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’-র নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ ছিল।’’

এমনকি, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘সিমি’-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) তুলনাও টেনেছিলেন তিনি! বলেছিলেন, ‘‘বিরোধী জোটের নামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পাপ।’’ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে কংগ্রেসের স্লোগান ‘ইন্দিরা ইজ় ইন্ডিয়া’-কেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। তবে বিরোধীদের জোট নয়, দেশের নাম বদলের জন্য মোদী সরকারের ‘সম্ভাব্য উদ্যোগ’ আসলে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ তত্ত্ব নিয়ে আরএসএসের পুরনো অবস্থানের অনুসারী বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।

তাঁদের মতে সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রতীক বলে চিহ্নিত করেছে। ভারতীয় সংবিধান যা-ই বলুক না কেন, আরএসএস নেতাদের যুক্তি, ব্রিটিশদের দেওয়া ওই নাম সনাতন সংস্কৃতি এবং ‘অখণ্ড ভারত’ চেতনার পরিপন্থী। এমনকি, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৩ সালে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত অসমের শিলচরে বলেছিলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনা ইন্ডিয়ায় ঘটে, ভারতে নয়।’ এই আবহেই এনসিইআরটির ‘ভারত’-নির্দেশিকা নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিল।

Advertisement
আরও পড়ুন