অশান্ত মণিপুর। ছবি: পিটিআই।
রবিবার আরও এক মহিলার দেহ নদীতে ভাসতে দেখলেন স্থানীয়েরা। যা নিয়ে ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল মণিপুরের জিরিবাম জেলায়। এর আগে দু’দিনে ছ’জনের দেহ উদ্ধার হয়। তবে এখনও তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। ছ’জনের অপহরণ এবং খুনের বিচার চেয়ে সে রাজ্যে প্রতিবাদ চলছে। শনিবার রাতে সেই বিক্ষোভ পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে। অভিযোগ, রাজ্যের দুই মন্ত্রী এবং বিধায়কের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এ হেন পরিস্থিতিতে ফের সণিপুর সরকারকে হুঁশিয়ারি দি, মেইতেইরা। তাদের দাবি,, সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। এন বীরেন সিংহের সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দিয়েছে মেইতেইরা।
গত কয়েক দিনে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। জিরিবাম, পশ্চিম ইম্ফল, বিষ্ণুপুর-সহ একাধিক জেলায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্য জুড়ে ছ’টি থানা এলাকায় নতুন করে বলবৎ করা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা)। উল্লেখ্য, গত মাসের শুরুতেই মণিপুরে ছ’মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছিল আফস্পা-র মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম-সহ ১৯টি থানা এলাকা বাদ দিয়ে গোটা রাজ্যেই এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আরও ছ'টি থানায় আফস্পা বলবৎ হয়েছে। শনিবারের পর থেকে আবার এক বার আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। চাপের মুখে মণিপুর সরকারও কেন্দ্রের কাছে এই দাবি জানিয়েছে।
গত কয়েক দিনে মণিপুরের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সে রাজ্যে সম্প্রতি কুকি জঙ্গি এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ, সেই সময় একদল কুকি জঙ্গি মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে। ওই ছ’জন ছিলেন মেইতেই সম্প্রদায়ের। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১০ কুকি জঙ্গি। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। জিরিবাম জেলা থেকে একই পরিবারের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছিল কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় অসম-মণিপুর সীমানায় জিরি নদীতে তিনটি দেহ ভাসতে দেখা যায়। জিরিঘাট এলাকা থেকে ওই তিন দেহ উদ্ধার করে শুক্রবার রাতে অসমের শিলচরের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সেই দেহগুলির ময়নাতদন্ত করা হয়। শনিবার আরও তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। তার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রাজধানী ইম্ফলের দিকে দিকে জ্বলেছে আগুন।
অশান্ত মণিপুর নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধী আবার এক বার নরেন্দ্র মোদীকে মণিপুরে যাওয়ার কথা বললেন। রাহুল-সহ কংগ্রেসের অন্যন্যা নেতা-নেত্রী এর আগেও বার বার একই দাবি জানিয়েছেন। শনিবারের পর সেই দাবি আরও জোরালো হল। মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি।